বঙ্গবন্ধুর খুনি নূর চৌধুরীকে নিয়ে কানাডার টিভিতে প্রতিবেদন

বঙ্গবন্ধুর খুনি নূর চৌধুরীকে নিয়ে কানাডার টিভিতে প্রতিবেদন

সিবিসি টেলিভিশিনের জনপ্রিয় অনুসন্ধানী বিভাগ ‘দ্য ফিফথ স্টেট’ এ ‘দ্য অ্যাসাসিন নেক্সট ডোর’ শিরোনামের ৪২ মিনিটের এই প্রতিবেদনটি প্রচারিত হয় শুক্রবার (১৭ নভেম্বর) রাত ১০ টায়।

প্রতিবেদনে টরন্টোর নিজ ফ্ল্যাটের বেলকনিতে নূর চৌধুরীকে দেখানো হয়। দীর্ঘদিন অনুসরণ করে তাকে খুঁজে বের করেছে বলে দাবি করে ফিফথ স্টেটের অনুসন্ধানী দল। নূর চৌধুরীর কানাডায় পলাতক থাকা এবং খুনের দায়ে সাজা বাস্তবায়নে তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর বিষয় প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

কানাডার ইটোবিকোর একটি কনডোমিনিয়ামের তিনতলায় থাকে ৭০ বছর বয়সী বঙ্গবন্ধু হত্যার এই আসামি। প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, প্রতিদিন বিকেলে সে বেলকনিতে আসে। এই প্রথমবারের মতো তার দেখা পাওয়া গেল ক্যামেরায়।

নূর চৌধুরী কোথায় আছে, কী করছে, এ নিয়ে জানা থাকলেও তথ্য আকারে সামনে আসেনি তেমন। তার অবস্থান নিয়ে এক ধরনের ধোঁয়াশা তৈরির প্রচেষ্টা ছিলো। ধারণা করা হচ্ছে, এই রিপোর্ট প্রচারের মধ্য দিয়ে সেই ধোঁয়াশা কেটে যাবে এবং কানাডিয়ান সাধারণ জনগণ তাদের পাশের বাসায় থাকা ‘ ভয়াল ভয়ানক’ এই খুনি সম্পর্কে পরিষ্কার একটি ধারণা পাবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি নূর চৌধুরীকে দেখা গেছে কানাডার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন সিবিসিতে।

প্রতিবেদনে টরোন্টোর নিজ ফ্লাটের ব্যালকনিতে নূর চৌধুরীকে এক ঝলক দেখানো হয়। গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় আত্মগোপনে থাকা নূর চৌধুরীকে ড্রাইভিং সিটে বসে থাকা অবস্থায় ধরতে পারেন প্রতিবেদক। কিন্তু কথা না বলে দ্রুত গাড়ি চালিয়ে কোনোমতে কেটে পড়ে সে। দীর্ঘদিন অনুসরণ করে খুঁজে বের করেছে ফিফথ স্টেটের অনুসন্ধানী দলটি।

বঙ্গবন্ধুকে নিজ হাতে গুলি করে হত্যার পর কূটনীতিক হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দায়িত্ব পালন করে এই নূর চৌধুরী। তার দেশের বাড়ি সিলেট সদরের রেলষ্টেশন সংলগ্ন লাউয়াই গ্রামে। উল্লেখ্য, তার পরিবারের বা বংশের কারোরই নামের পদবী ‘চৌধুরী‘ নয়। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর সে নিজে নামের সে ‘চৌধুরী’ পদবী ব্যবহার করে আসছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।

১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এলে নূর চৌধুরী পালিয়ে প্রথমে আমেরিকা, পরে কানাডায় প্রবেশ করে দর্শনার্থী হিসেবে। এরপর ১৯৯৯ সালে শরণার্থী হিসেবে থেকে যাওয়ার আবেদন করলেও কানাডা সরকার তা নাকচ করে দেয়। আপিল করেও হেরে যায় নূর চৌধুরী। ২০০৯ সালে কানাডা থেকে নূরকে বের করে দেয়ার নির্দেশ দেন কানাডিয়ান সর্বোচ্চ আদালত। কিন্তু বাংলাদেশে পাঠালে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হতে পারে, এমন শঙ্কার কথা জানিয়ে ২০১০ সালের দিকে সরকারের কাছে ‘প্রি রিমুভাল রিস্ক এসেসমেন্ট’র আবেদন করে নূর চৌধুরী। যেহেতু কানাডা মৃত্যুদণ্ড সমর্থন করে না, সেহেতু এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে প্রায় ১৪ বছর ধরে সেখানে মুক্ত জীবনযাপন করছে এই ঘাতক।

কানাডায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার বলেছেন, এই একটি ইস্যু বাদে কানাডার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ। কেবল বাংলাদেশি হাই কমিশনার হিসেবে নয়, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ হিসেবে আমি চাই  নূর চৌধুরীকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হোক।