ড. ইউনূসের জেল অত:পর শর্তে জামিন এবং তাঁর প্রতিক্রিয়া
ইংরেজি নববর্ষের প্রথম দিনে বাংলাদেশের একমাত্র শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মোহাম্মদ ইউনূসসহ তাঁর প্রতিষ্টানের ৩জনকে বাংলাদেশের আদালত ৬ মাসের কারাদন্ড প্রদান করেছে। শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. ইউনূসকে সেইসাথে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছে। দণ্ডপ্রাপ্ত অপর তিনজন হলেন গ্রামীণ টেলিকমের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আশরাফুল হাসান, পরিচালক নুর জাহান বেগম ও মো. শাহজাহান।
১ জানুয়ারি সোমবার বেলা ৩টার দিকে এই রায় ঘোষণা করেন ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতের বিচারক বেগম শেখ মেরিনা সুলতানা।
৫ মিনিটের মাথায় জামিন লাভ
তবে কারাদণ্ড পাওয়ার ৫ মিনিটের মধ্যেই শান্তিতে নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনকে জামিন দিয়েছেন শ্রম আদালত। এক মাসের মধ্যে আপিল করার শর্তে সোমবার (১ জানুয়ারি) শ্রম আদালতের বিচারক শেখ মেরিনা সুলতানা আসামিদের জামিন মঞ্জুর করেন।
মামলায় অভিযোগ আনা হয় যে শ্রম আইন, ২০০৬ এবং বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা, ২০১৫ অনুযায়ী, গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক বা কর্মচারীদের শিানবিশকাল পার হলেও তাঁদের নিয়োগ স্থায়ী করা হয়নি। প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিক বা কর্মচারীদের মজুরিসহ বাৎসরিক ছুটি দেওয়া, ছুটি নগদায়ন ও ছুটির বিপরীতে নগদ অর্থ দেওয়া হয় না। মামলায় আরও অভিযোগ আনা হয়, গ্রামীণ টেলিকমে শ্রমিক অংশগ্রহণ তহবিল ও কল্যাণ তহবিল গঠন করা হয়নি এবং লভ্যাংশের ৫ শতাংশের সমপরিমাণ অর্থ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন আইন অনুযায়ী গঠিত তহবিলে জমা দেওয়া হয় না।
রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, আসামিপক্ষের আইনজীবীরা এক নম্বর আসামির বিষয়ে প্রশংসাসূচক বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন। তাকে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াই করা নোবেলজয়ী আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব বলা হয়েছে। কিন্তু এ আদালতে নোবেলজয়ী ইউনূসের বিচার হচ্ছে না, গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান হিসেবে বিচার হচ্ছে। এসময় আদালত বলেন, ড. ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে।
অভিযোগের জবাবে আত্মপক্ষ সমর্থন করে ৯ নভেম্বর ড. ইউনূসসহ চারজন বিবাদী লিখিতভাবে আদালতকে বলেছিলেন, গ্রামীণ টেলিকমের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয় নিজস্ব নীতিমালা অনুযায়ী। কারণ, গ্রামীণ টেলিকম যেসব ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করে, সেগুলো চুক্তিভিত্তিক। তবে গ্রামীণ টেলিকমের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে স্থায়ী কর্মীর মতো ভবিষ্য তহবিল (প্রভিডেন্ট ফান্ড), আনুতোষিক (গ্র্যাচুইটি), অর্জিত ছুটি ও অবসরকালীন ছুটি দেওয়া হয়ে থাকে। মামলায় নিয়োগ স্থায়ী না করার যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা প্রশাসনিক ও দেওয়ানি মামলার বিষয়।
‘যে দোষ করিনি, সেই দোষে শাস্তি পেলাম‘ : ড. ইউনূস
রায়ে দন্ড হবার পর এক প্রতিক্রিয়ায় ড. ইউনূস বলেন, ‘আজ রায় ঘোষণা শুনতে আমার অনেক বিদেশি বন্ধু-বান্ধব এসেছেন। যাদের সঙ্গে বহুদিন দেখা হয়নি। আজ তাদেরকে দেখে খুব আনন্দ লাগছিল। সবাই রায়ের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। যে দোষ করিনি, সেই দোষে শাস্তি পেলাম। এই দুঃখটা মনে রয়ে গেল। এই সাজা আমাদের কপালে ছিল। আজ আনন্দের দিনে আঘাতটা পেলাম।’
রায় ঘোষণার সময় আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত ছিলেন মানবাধিকারকর্মী আইরিন খান, আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী সারা হোসেন প্রমুখ। আইরিন খান সাংবাদিকদের বলেন, ড. ইউনূসের সাজার রায়ে তিনি বিস্মিত। তাঁকে (ড. ইউনূস) হয়রানি করার জন্যই এই সাজা দেওয়া হয়েছে।