তুরস্ক থেকে দেশে ফিরেছেন ৪০ হাজার সিরীয় শরণার্থী

তুরস্ক থেকে দেশে ফিরেছেন ৪০ হাজার সিরীয় শরণার্থী

তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলে ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর গত দু’সপ্তাহে সেখান থেকে নিজ দেশে ফিরে গেছেন প্রায় ৪০ হাজার সিরীয় শরণার্থী। তাদের প্রায় সবাই সিরিয়ার আলেপ্পো প্রদেশের বাসিন্দা; গৃহযুদ্ধের আঁচ থেকে আত্মরক্ষার্থে শরণার্থী হিসেবে তুরস্কে আশ্রয় নিয়েছিলেন।

তুরস্কের একাধিক সরকারি কর্মকর্তা এবং সিরিয়ার একটি সরকারবিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠীর কমান্ডার মাজেন আলৌস রয়টার্সকে নিশ্চিত করেছেন এ তথ্য। তুরস্কের কর্মকর্তারা বলেছেন, ভূমিকম্পের পর আশ্রিত শরণার্থীদের চলাচলের ওপর যাবতীয় কড়াকড়ি শিথিল করেছে সরকার। তারপর থেকেই শরণার্থী ক্যাম্প থেকে দলে দলে থেকে নিজ দেশে ফিরে যাচ্ছেন সিরীয় শরণার্থীরা।

গত ৬ ফেব্রুয়ারি সকালে তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ কাহরামানমারাশে দফায় দফায় ভূমিকম্প ও আফটার শক হয়। রিখটার স্কেলের রেকর্ড অনুযায়ী, ভূমিকেম্পর সর্বোচ্চ মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৮।  ভূমিকম্পের পর গত ২২ দিনে তুরস্ক ও সিরিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলের ধ্বংস্তুপ থেকে উদ্ধার করা মৃতদেহের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।

তুরস্ক-সিরিয়ার সীমান্তের একদিকে কাহরামানমারাশ, অন্যদিক সিরিয়ার আলেপ্পো প্রদেশের অবস্থান। এই সীমান্তে মোট চারটি ক্রসিং আছে। প্রধান ক্রসিংটির নাম বাব আল-হাওয়া; বাকিগুলোর নাম— জারাবুলুস, বাব আল-সালাম এবং তাল আবিয়াদ।

আলেপ্পো প্রদেশের অধিকাংশ এলাকা গত কয়েক বছর ধরে নিয়ন্ত্রণ করছে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরোধী একাধিক সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী। সীমান্তপথগুলোর নিয়ন্ত্রণও তাদেরই হাতে।

তেমনই একটি সরকাবিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠীর কমান্ডার মাজেন আলৌস রয়টার্সকে বলেন, গত দু’ সপ্তাহে বাব আল-হাওয়া ক্রসিং দিয়ে প্রায় ১৪ হাজার, জারাবুলুস ক্রসিং দিয়ে প্রায় ১০ হাজার এবং বাব আল-সালাম ও তাল আবাইদ ক্রসিং দিয়ে প্রায় ১৫ হাজার সিরীয় নাগরিক নিজ দেশে ফিরে এসেছেন।

গত প্রায় এক যুগব্যাপী গৃহযুদ্ধেরে জেরে আলেপ্পো থেকে লাখ লাখ মানুষ তুরস্কের কাহরামানমারাশ ও আশপাশের প্রদেশগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে তুরস্কের বিভিন্ন শরণার্থী ক্যাম্পে নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত শরণার্থীর সংখ্যা প্রায় ৩৫ লাখ।

এই শরণার্থীরা একসময় সীমান্ত পাড়ি দিয়ে নিজ দেশে অবাধে যাতায়াত করতে পারতেন। তবে গত বছর এপ্রিলে, ঈদুল ফিতরের ছুটির আগে এ ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নেয় তুরস্কের সরকার। শরণার্থীদের জানিয়ে দেওয়া হয়, যদি কোনো শরণার্থী ক্যাম্প ছেড়ে নিজ দেশে যায়— তাহলে তাকে আর তুরস্কে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।

তবে গত ৬ ফেব্রুয়ারির ভূমিকম্পে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ও প্রাণহানির জেরে তুরস্কে বিশৃঙ্খলা শুরু হওয়ায় শরণার্থীদের ওপর বিধিনিষেধ শিথিল করে দেশটির সরকার। তারপর থেকেই দলে দলে নিজ দেশে ফিরে যাচ্ছেন সিরীয় শরণার্থীরা।

দেশটির প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেছেন, সামনের দিনগুলোতে দেশে ফিরে যাওয়া শরণার্থীদের সংখ্যা আরও বাড়বে।

৫৫ বছর বয়সী সিরীয় শরণার্থী খালেদ আল আহমেদ কাহরামানমারাশের একটি ক্যাম্প থেকে নিজ দেশে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘আমার অধিকাংশ আত্মীয়-স্বজন থাকে আলেপ্পোতে। ভূমিকম্পের পর থেকে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি। তাদের খোঁজ খবর নিতেই দেশে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

‘আর (ভূমিকম্পের পর থেকে) এখানে যা শুরু হয়েছে...আপাতত নিজ দেশে ফিরে যাওয়াটাই সবচেয়ে নিরাপদ।’