ফেলনা প্লাস্টিক বোতল ও পলিথিন বর্জ্যের 'কোরাল মাছ'

ফেলনা প্লাস্টিক বোতল ও পলিথিন বর্জ্যের 'কোরাল মাছ'

যতদূর চোখ যায় শুধু বিস্তীর্ণ নীল জলরাশি। জলের ও পাড়ে যেনো নেমেছে নীলাকাশ। সমুদ্র এমন দৃশ্য মুহুর্তেই হৃদয়কে উদ্দেলিত করবে। এমন  দৃশ্য উপভোগ করা যায় বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল ধারণ করা দ্বীপ সেন্ট মার্টিন আইল্যান্ডে। এই দ্বীপের উত্তর-পশ্চিম কোনার সমুদ্রসৈকতে দাঁড়িয়ে আছে দৃষ্টিনন্দন একটি কোরাল মাছের ভাস্কর্য। 

অবাক করা বিষয় হচ্ছে ২০ ফুট লম্বা এবং ৬ ফুট প্রস্থের ভাস্কর্যটি ইট-পাথর দিয়ে তৈরি হয়নি। সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ভ্রমণে গিয়ে পর্যটকেরা বালুচরে যেসব প্লাস্টিক বোতল, টিনের কৌটা, চিপসের প্যাকেট, পলিথিন ফেলে দেন—সেসব বর্জ্য কুড়িয়ে তৈরি হয়েছে মাছের ভাস্কর্যটি। 

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেলো মাছের এই ভাস্কর্যটি  তৈরি করেছে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) ফিশারিজ, অ্যাকুয়াকালচার ও মেরিন সায়েন্স অনুষদ। এ কাজে সহযোগিতায় ছিল চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ অনুষদ এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থী।

কেনো তারা  ফেলনা প্লাস্টিক বোতল ও পলিথিন বর্জ্য দিয়ে এই মাছ বানালেন? জানা গেলো উত্তর। ভাস্কর্যটি তৈরির উদ্দেশ্য হলো, সৈকত কিংবা বঙ্গোপসাগরের কোথাও যেন পর্যটকেরা প্লাস্টিকের বোতলসহ আবর্জনা না ফেলেন এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে আন্তরিক হন।

বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পূর্বাংশে অবস্থিত মাত্র ৮ বর্গকিলোমিটার আয়তনের দ্বীপ সেন্ট মার্টিন।  প্রবাল প্রতিবেশের সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যকে রক্ষার উদ্যোগ হিসেবে বাংলাদেশ সরকার এটিকে গত ৪ জানুয়ারি ২০২২ তারিখে সামুদ্রিক সুরক্ষিত অঞ্চল বা মেরিন প্রোটেক্টেড এরিয়া হিসাবে ঘোষণা। কিন্তু  যত্রতত্র প্লাস্টিক ও অন্যান্য আবর্জনা ফেলায় এই দ্বীপের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে ক্রমাগত। তাই সচেতনা বাড়াতেই এই উদ্যোগে।

ভাস্কর্যটি বানাতে  প্লাস্টিক বোতল, চিপসের প্যাকেট, পলিথিন, ফেলে দেয়া ছেড়া জাল, বস্তা ইত্যাদি আবর্জনা ব্যবহার করা হয়েছে। 

সরেজমিনে সেন্ট মার্টিনে দেখা যায় কোরাল মাছের ম্যুরালটিকে ঘিরে থৈরি হয়েছে  পর্যটকদের ভিড়। তারা ম্যুরালটিকে নিয়ে ছবি তোলছেন, ভিডিও করছেন এবং যত্র তত্র যে  যত্রতত্র প্লাস্টিক ও অন্যান্য আবর্জনা ফেলা যাবে না সে বিষয়েও সচেতন হচ্ছেন।

এ কার্যক্রমের পরিকল্পনাকারী ও প্রধান সমন্বয়ক অধ্যাপক ড.  কাজী  আহসান হাবীব। এ কার্যক্রমে সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে রয়েছে চ্যানেল ২৪ এবং অর্থায়নে আছে কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশন (কেজিএফ)।

পরিকল্পনাকারীর পক্ষ থেকে জানানো হয়,  প্রতিবছর শীতকালে প্রতিদিন প্রায় ৩-৪ হাজার পর্যটক সেন্ট মার্টিন দ্বীপে বেড়াতে আসেন। তাদের অনেকেই জানেন না যে এই দ্বীপের সমুদ্রতলে লুকিয়ে আছে বিচিত্র সব বর্ণিল ও মনোরম সুন্দর সব প্রাণী ও উদ্ভিদ।

কিন্তু অপরিকল্পিত পর্যটন, দূষণ, মাছ ও প্রবালের আবাস স্থল ধ্বংস, মাত্রাতিরিক্ত মৎস্য আহরন, অবৈধভাবে প্রবাল আহরণ ও অবকাঠামো নির্মাণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সেন্ট মার্টিনের প্রবাল প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য বর্তমানে হুমকির মুখে।

পরিবেশ দূষণের অনেকগুলো কারণের মধ্যে অন্যতম প্রধান কারণ হলো প্লাস্টিক ও পলিথিন আবর্জনা, ছেড়া জাল ও নাইলন বস্তা নিক্ষেপ, যা চূড়ান্তভাবে সাগরের পানিতে চলে যায় ও এর অনেকাংশ পানির নীচে প্রবালের উপর জমা হয়ে প্রবাল প্রতিবেশ বিনষ্ট করে। তাই সচেতনা বাড়াতে এই উদ্যোগ।