তোমরা পৃথিবীতে বিচরণ করো এবং দেখে নাও : সুরা আলে ইমরান

দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া ডেস্ক ভ্রমণ মহান আল্লাহর সৃষ্টি-নিদর্শন অবলোকন ও অনুধাবন করার একটি অনন্য মাধ্যম। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘আপনি বলুন, তোমরা ভূপৃষ্ঠে ভ্রমণ করো এবং অনুধাবন করো- আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টিজগৎকে কী প্রকারে প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন আবার আল্লাহ তায়ালা শেষবারেও সৃষ্টি করবেন। নিঃসন্দেহে আল্লাহ সব বিষয়ে ক্ষমতাবান’ (সুরা আনকাবুত : ২০)। সুতরাং দেখা যাচ্ছে,  প্রতিটি মানুষেরই ভ্রমণ করা খুবই জরুরী প্রয়োজন।  

এ ছাড়াও আল্লাহ বিভিন্ন জাতির ধ্বংসাবশেষ অবলোকন করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয় তোমাদের পূর্বে বিভিন্ন জাতি অতীত হয়েছে। অতএব, তোমরা পৃথিবীতে বিচরণ করো এবং দেখে নাও, অবিশ্বাসীদের পরিণাম কিরূপ হয়েছে।’ (সুরা আলে ইমরান : ১৩৭)

মানুষ কোনো না কোনো কাজে একস্থান থেকে অন্যস্থানে ভ্রমণ করে থাকে। আধুনিক এই যান্ত্রিক যুগে সফর বা ভ্রমণ মানুষের নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়েছে দাঁড়িয়েছে। তাই মানুষ নিজ প্রয়োজনে অথবা মহান স্রষ্টার বিভিন্ন সৃষ্টি প্রত্যক্ষ করার জন্য প্রতিনিয়ত সফর করে থাকে। আল্লাহ একেক স্থানকে একেক রূপ-সৌন্দর্যে সাজিয়েছেন। পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে আল্লাহর বিভিন্ন সৃষ্ট জীব, পাহাড়-পর্বত, সাগর-নদী, আগ্নেয়গিরি, জলপ্রপাত, ঝরনাধারা দর্শনের মাধ্যমে বিচিত্র অভিজ্ঞতা ও ভিন্ন ভিন্ন জ্ঞান অর্জন করা হয়। স্রষ্টার অপূর্ব সৃষ্টি সম্পর্কে জানা যায়। সফরের মাধ্যমে আল্লাহর মুমিন বান্দাগণ মহান প্রভুর দয়া, সৃষ্টি ও ক্ষমতা সম্পর্কে ওয়াকিফহাল হয়। ফলে মুমিন বান্দাদের ঈমান বৃদ্ধি পায়। ইসলামের প্রতি তাদের বিশ্বাস আরও দৃঢ় হয়। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয় আসমানগুলো ও পৃথিবী সৃজনে এবং পর্যায়ক্রমে দিবা ও রাত্রির আগমনে এবং জাহাজগুলোতে যা সমুদ্রে চলাচল করে মানুষের লাভজনক পণ্যদ্রব্য নিয়ে আর পানিতে যা আল্লাহ আসমান থেকে বর্ষণ করেন। অতঃপর তা দ্বারা জমিনকে অনুর্বর হওয়ার পর আবার সরস সতেজ করেন। আর সর্ব প্রকারের জীবজন্তু তাতে ছড়িয়ে দিয়েছেন। আর বায়ু রাশির পরিবর্তনে এবং মেঘমালায় যা আসমান ও জমিনের মধ্যস্থলে আবদ্ধ থাকে, প্রমাণগুলো আছে সেসব লোকদের জন্য যারা জ্ঞান রাখে।’ (সুরা বাকারা : ১৬৪)

বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) বলেন, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া আল্লাহ নিঃসন্দেহে কবুল করেন, মাতা-পিতার দোয়া, মুসাফিরের দোয়া এবং মজলুম ব্যক্তির দোয়া’ (আবু দাউদ : ১৫৩৬)। ফুকহায়ে কেরাম বলেছেন, যদি শিক্ষা ও উপদেশ গ্রহণের উদ্দেশে সফর করা হয় তবে এসব সফর ইবাদত হিসেবে গণ্য হবে। কিন্তু যদি শুধু আনন্দ লাভের জন্য অথবা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে সফর করা হয়, তবে তা ইবাদত হিসেবে গণ্য হবে না। গুনাহের উদ্দেশ্যে না হলে সব ধরনের সফরই বৈধ বলে বিবেচিত হবে। তাই গুনাহের সফর থেকে আমাদের বিরত থাকা উচিত।

যুগে যুগে বহু জাতি উন্নতি-অগ্রগতির উচ্চ শিখরে আরোহণ করেছে, কিন্তু তারা ছিল আল্লাহর অবাধ্য, অকৃতজ্ঞ। তারা আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাস করেনি, আখেরাতকে অস্বীকার করেছে। তাই তাদের কৃতকর্মের ভয়াবহ পরিণতি তারা ভোগ করেছে। তাদের নির্মিত আকাশচুম্বী ইমারতগুলোর ধ্বংসাবশেষ আজও রয়েছে পৃথিবীতে বিদ্যমান এবং এসব ধ্বংসাবশেষ পরিণামদর্শী মানুষের শিক্ষা গ্রহণের জন্য যথেষ্ট।