সন্তান জন্ম দিলেই মিলবে কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থ
দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলের উপকণ্ঠে ছোট্ট একটি অ্যাপার্টমেন্টে বসবাস করেন কোউন জং-হো ও চো নাম-হি দম্পতি। তাঁদের সংসারে জু-হা নামের ১৭ মাসের এক ছেলেসন্তান রয়েছে।
একমাত্র সন্তানের বেড়ে ওঠা নিয়ে উদ্বিগ্ন এই দম্পতি। বিশেষত, সন্তান লালনপালনের অর্থের উৎস নিয়ে চিন্তিত তাঁরা। তাঁদের এ চিন্তা কিছুটা লাঘব করেছে দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার। কেননা, সন্তান পরিপালনে সরকারি ভাতা পাচ্ছে জং-হো ও নাম-হি দম্পতি।
স্থানীয় একটি রেডিও চ্যানেলের সম্প্রচারকর্মী জং-হো বলেন, দক্ষিণ কোরিয়ায় সন্তান লালনপালনের খরচ অনেক বেশি। তবে দুটি উপায়ে এ খরচের ধাক্কা সামাল দেওয়া যায়। এক, অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে আনা। দুই, সরকারি সহায়তা পাওয়া।
উদাহরণ দিতে গিয়ে চো নাম-হি জানান, তাঁরা যে আবাসিক ভবনে বসবাস করেন, সেখানে একটা সরকারি কেন্দ্র রয়েছে। ওই কেন্দ্র থেকে খেলনা কিংবা স্ট্রলারের মতো শিশুদের ব্যবহারের বিভিন্ন জিনিস বিনা মূল্যে ধার নেওয়া যায়। প্রয়োজন শেষে ফেরত দিলেই হলো। এটা বড় একটা সুবিধা।
এমন বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার পাশাপাশি সন্তান নেওয়ার জন্য দম্পতিদের অর্থ সহায়তাও দেয় দক্ষিণ কোরিয়া সরকার। গত বছর থেকে সন্তান নিলে দক্ষিণ কোরীয় বাবা–মায়েরা সরকারের কাছ থেকে এককালীন ১ হাজার ৫১০ ডলার পান।
এ ছাড়া লালনপালনের জন্য নবজাতকের বয়স এক বছর হওয়ার আগপর্যন্ত প্রতি মাসে ৫২৮ ডলার করে দেওয়া হয়। আর সন্তানের বয়স এক থেকে দুই বছরের মধ্যে হলে দেওয়া হয় মাসে ২৬৪ ডলার। ২০২৪ সাল থেকে মাসিক সহায়তার এই পরিমাণ বেড়ে হবে যথাক্রমে ৭৫৫ ডলার ও ৩৭৭ ডলার।
শুধু তা–ই নয়, সন্তানের স্কুলে যাওয়ার বয়স হওয়ার আগপর্যন্ত মাসে ১৫১ ডলার করে সহায়তা দেয় দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার। নিম্ন আয়ের পরিবার ও একাকী বাবা–মায়েরা আরও আনুষঙ্গিক সহায়তা পান। সন্তানসম্ভবা নারী ও নবজাতককে দেওয়া হয় চিকিৎসা সহায়তা। নবজাতকের জন্য রয়েছে বিনা মূল্যের বেবি সিটিং সেবা।
দক্ষিণ কোরিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম জেলা বুসান। এখানকার স্থানীয় সরকার একাধিক সন্তান নেওয়ার জন্য দম্পতিদের বাড়তি সুবিধা ও সহায়তা দেয়। বুসানের কোনো নারী তৃতীয় বা এরও বেশি সন্তানের জন্ম দিলে ৭ হাজার ৫৫২ ডলার বোনাস পান। এর আগে এ সহায়তার পরিমাণ ছিল ৩৭৭ ডলার।
দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেওলা প্রদেশের প্রত্যন্ত এলাকাতেও একই সুবিধা রয়েছে। এখানে একটি সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য মা-বাবাকে প্রতি মাসে ৪৫৩ ডলার দেওয়া হয়। সন্তানের বয়স সাত বছর হওয়া পর্যন্ত সহায়তা দেওয়া অব্যাহত থাকে।
সন্তান জন্ম দেওয়ার বিনিময়ে বিপুল পরিমাণে সরকারি সহায়তা দেওয়ার বড় কারণ নিম্ন জন্মহার। বিশ্বে সবচেয়ে কম জন্মহারের দেশগুলোর একটি দক্ষিণ কোরিয়া। গত বছর দক্ষিণ কোরিয়ার নারীদের মধ্যে সন্তান জন্মদানের গড় হার শূন্য দশমিক ৭৮ শতাংশে নেমে এসেছে। আগের বছরও তা ছিল শূন্য দশমিক ৮১ শতাংশ।
মূলত, শহুরে ছোট পরিবারের বিকাশ, বাড়তি খরচ ও ঝামেলা, পেশাজীবনকে বেশি প্রাধান্য দেওয়াসহ বিভিন্ন কারণে দক্ষিণ কোরিয়ার দম্পতিরা সন্তান নিতে চান না। এই অনীহা দক্ষিণ কোরিয়ার জনসংখ্যার বিন্যাসকে পাল্টে ফেলছে, যা দেশটিকে অর্থনৈতিক সংকটের মুখে ফেলতে পারে।
এ কারণে দম্পতিদের সন্তান জন্মদানের আগ্রহকে উসকে দিতে দক্ষিণ কোরিয়ার কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় সরকার বিশেষ ভাতাসহ নানা ধরনের আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে।