বাংলাদেশের মন্ত্রিসভায় নতুন ও বাদ পড়া মন্ত্রী এবং উপদেষ্টা হচ্ছেন যাঁরা


৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর বাংলাদেশে নতুন সংসদ সদস্যদের শপথ গ্রহণ আজ ১০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়েছে। আগামীকাল (১১ জানুয়ারি) নতুন মন্ত্রীসভা অনুষ্টিত হতে যাচ্ছে। নতুন সরকারের মন্ত্রিসভায় শপথ নেওয়ার জন্য ফোন পেয়েছেন ৩৬ জন।
এদিকে, একটানা চারবারের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে শপথ গ্রহণ করেছেন। আগামীকাল তাঁর নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও ২৫ জন মন্ত্রী ও ১১ জন প্রতিমন্ত্রী থাকছেন। এদের মধ্যে টেকনোক্রেট কোটায় মন্ত্রী হচ্ছেন ইয়াফেস ওসমান এবং ডা. সামন্ত লাল সেন। মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের দপ্তর পরে ভাগ করে দেওয়া হবে। 


উল্লেখ্য, এবার সিলেট বিভাগ থেকে ৫ জন বাঘা বাঘা মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী বাদ পড়লেন। তার বদলে মৌলভীবাজার-৪ থেকে নির্বাচিত এমপি মো. আব্দুস শহীদ পূর্ণমন্ত্রী এবং সিলেট-২ আসনের এমপি মো. সফিকুর রহমান চৌধুরী প্রতিমন্ত্রী হিসাবে মন্ত্রীসভায় ঠাঁই পাচ্ছেন। এছাড়া, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা মণ্ডলীতেও এবার থাকছে বেশ চমক। 


নতুন মন্ত্রীদের আপ্যায়নে বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) নানা বাহারি খাবারের আয়োজনে রেখেছে বঙ্গভবন। রাষ্ট্রপতি কার্যালয়ের খাবারের মেন্যু লিস্ট থেকে জানা যায়, বরাবরের মতো এবারও আনা হয়েছে খাবারের বৈচিত্র।


রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন জানান নতুন মন্ত্রীদের আপ্যায়নে নানা রকম খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মাংস ও সবজি জাতীয় খাবারে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন ফলেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। খাবারের হিসেবে দেওয়া হবে মাটন শিক কাবাব, চিকেন সাসলিক, ভেটকি মাছের ফিস ফিঙ্গার। এছাড়া বয়েল্ড ভেজিটেবলসের সঙ্গে দেওয়া হবে মাশরুম, পনির সমুচা ও স্পাই। মিষ্টি মুখ করতে পরিবেশন করা হবে পাটিসাপটা পিঠার পাশাপাশি মিষ্টি-বাকলাবা। এছাড়া কমলা, আপেল, আঙ্গুর দিয়ে সাজানো ফলে বাস্কেটও থাকবে সন্ধ্যার আপ্যায়নে।
এছাড়াও, বঙ্গভবনের সবুজ লনে সাজানো শামিয়ানার নিচে চা আর কফিতে জমবে শেষ সময়ের আড্ডা আর খোশগল্প।

এবারের মন্ত্রীসভায় পূর্ণমন্ত্রী হিসাবে যাঁরা ঠাঁই পাচ্ছেন : 


১. আ ক ম মোজাম্মেল হক (গাজীপুর-১)
২. ওবায়দুল কাদের (নোয়াখালী-৫)
৩. নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন (নরসিংদী-৪)
৪. আসাদুজ্জামান খান (ঢাকা-১২)
৫. ডা. দীপু মনি (চাঁদপুর-৩)
৬. মো. তাজুল ইসলাম (কুমিল্লা-৯)
৭. মুহাম্মদ ফারুক খান (গোপালগঞ্জ-১)
৮. আবুল হাসান মাহমুদ আলী (দিনাজপুর-৪)
৯. আনিসুল হক (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪)
১০. মোহাম্মদ হাছান মাহমুদ (চট্টগ্রাম-৭)
১১. মো. আব্দুস শহীদ (মৌলভীবাজার-৪)
১২. সাধন চন্দ্র মজুমদার (নওগাঁ-১)
১৩. র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩)
১৪. মো. আব্দুর রহমান (ফরিদপুর-১)
১৫. নারায়ন চন্দ্র চন্দ (খুলনা-৫)
১৬. আব্দুস সালাম (ময়মনসিংহ-৯)
১৭. মহিবুল হাসান চৌধুরী (চট্টগ্রাম-৯)
১৮. ফরহাদ হোসেন (মেহেরপুর-১)
১৯. মো. ফরিদুল হক খান (জামালপুর-২)
২০. মো. জিল্লুল হাকিম (রাজবাড়ী-২)  
২১. সাবের হোসেন চৌধুরী (ঢাকা-৯)
২২. জাহাঙ্গীর কবির নানক (ঢাকা-১৩)
২৩. নাজমুল হাসান (কিশোরগঞ্জ-৬)
২৪. স্থপতি ইয়াফেস ওসমান
২৫. সামন্ত লাল সেন

প্রতিমন্ত্রী হচ্ছেন যাঁরা :


১. বেগম সিমিন হোমেন রিমি (গাজীপুর-৪)
২. নসরুল হামিদ (ঢাকা-৩)
৩. জুনাইদ আহমেদ পলক (নাটোর-৩)
৪. মোহাম্মদ আলী আরাফাত (ঢাকা-১৭)
৫. মো. মহিববুর রহমান (পটুয়াখালী-৪)
৬. খালিদ মাহমুদ চৌধুরী (দিনাজপুর-২)
৭. জাহিদ ফারুক (বরিশাল-৫)
৮. কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা (খাগড়াছড়ি)
৯. বেগম রুমানা আলী (গাজীপুর-৩)
১০. শফিকুর রহমান চৌধুরী (সিলেট-২)
১১. আহসানুল ইসলাম টিটু (টাঙ্গাইল-৬)

পূর্ণমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়া নতুন মুখ হলেন যাঁরা: 

নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন (নরসিংদী-৪), মুহাম্মদ ফারুক খান (গোপালগঞ্জ-১), আবুল হাসান মাহমুদ আলী (দিনাজপুর-৪), আব্দুস শহীদ (মৌলভীবাজার-৪), র. আ. ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩), মো আব্দুর রহমান (ফরিদপুর-১), নারায়ন চন্দ্র চন্দ (খুলনা-৫) আব্দুস সালাম (ময়মনসিংহ-৯), মো. ফরিদুল হক খান (জামালপুর-২), মো জিল্লুল হাকিম (রাজবাড়ী-২), সাবের হোসেন চৌধুরী (ঢাকা-৯), জাহাঙ্গীর কবির নানক (ঢাকা-১৩), নাজমুল হাসান (কিশোরগঞ্জ-৬)।

প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়া নতুন মুখ হলেন যাঁরা: 

বেগম সিমিন হোমেন রিমি (গাজীপুর-৪), মোহাম্মদ আলী আরাফাত (ঢাকা-১৭), কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা (খাগড়াছড়ি), বেগম রুমানা আলী (গাজীপুর-৩), শফিকুর রহমান চৌধুরী (সিলেট-২), আহসানুল ইসলাম টিটু (টাঙ্গাইল-৬)।

বর্তমান মন্ত্রিসভা থেকে যেসব পুরাতন মন্ত্রী এবং প্রতিমন্ত্রী বাদ পড়লেন: 

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন (সিলেট)
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ (সিলেট)
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান (সুনামগঞ্জ)
বন ও জলবায়ু বিষয়কমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন ( মৌলভীবাজার) 
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল 
কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক 
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক 
পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী গাজী গোলাম দস্তগীর 
মৎস্য ও প্রাণি সম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম 
ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী 
সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদূর উশৈসিং 
রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন 
ডাক ও টেলি-যোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার
গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ
মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বেগম ফজিলাতুন নেছা 
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম
বেসামরিক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী 
পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য 
ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান
সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ 
শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান 
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল
শিল্প মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম

প্রধানমন্ত্রী উপদেষ্টা পদে যাঁরা আসতে পারেন, যাঁরা বাদ পড়তে পারেন : 

নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের পাশাপাশি উপদেষ্টামণ্ডলীতে বেশ কয়েকজন নতুন মুখ আসতে পারেন এমন আলোচনা শোনা যাচ্ছে। তবে উপদেষ্টামন্ডলীতে কারা নতুন আসছেন বা কারা বাদ পড়ছেন এ ব্যাপারে পুরা শতভাগ নিশ্চিত হওয়া যায়নি। 
তবে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা হিসাবে সবচেয়ে বেশি যার নাম শোনা যাচ্ছে তিনি হচ্ছেন কবির বিন আনোয়ার। আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। 
প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী তাঁর দায়িত্বে থাকতে পারেন। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা তারিক সিদ্দিকী, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ দায়িত্ব অব্যাহত রাখবেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। 
অর্থ উপদেষ্টা হিসাবে ড. ফরাসউদ্দিন কিংবা অর্থনীতিবিদ কাউকে অর্থ নিয়োগ দেয়া হতে পারে। 
প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হিসাবে বাদ পড়তে পারেন যাঁরা : 
প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী আর থাকছেন না বলেই জানা গেছে।
প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমানের থাকা নিয়েও সংশয় এবং সন্দেহ রয়েছে। 
প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবার উপদেষ্টা হিসাবে নিযোগ পাচ্ছেন কি না তা নিয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। 

বাংলাদেশে একজন মন্ত্রীর বেতন/ভাতা ও সুযোগ সুবিধা কেমন?

বাংলাদেশে একজন মন্ত্রীর মাসিক বেতন ১ লাখ ৫ হাজার টাকা। অন্যদিকে প্রতিমন্ত্রীর বেতন ৯২ হাজার টাকা। নিয়ামক ভাতা মন্ত্রীর ক্ষেত্রে মাসিক ১০ হাজার টাকা, প্রতিমন্ত্রীর ক্ষেত্রে সাড়ে সাত হাজার টাকা। যদিও মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী কাউকেই তাদের বেতনের ওপর কর দিতে হয় না। 
একজন মন্ত্রীরা দৈনিক ভাতা পান দুই হাজার টাকা। প্রতিমন্ত্রীর ক্ষেত্রে তা দেড় হাজার টাকা। মন্ত্রীর স্বেচ্ছাধীন তহবিল ১০ লাখ ও  প্রতিমন্ত্রীর সাড়ে সাত লাখ টাকা। মোবাইল ফোন কেনার জন্য মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী দুজনেই ৭৫ হাজার টাকা পান।
এছাড়া সরকারি খরচে সার্বক্ষণিক গাড়ি পেয়ে থাকেন তাঁরা। ঢাকার বাইরে অফিসিয়াল ট্যুরের জন্য একটি অতিরিক্ত জিপ পান, যার যাবতীয় ব্যয় বহন করে বাংলাদেশ সরকার।
অপরদিকে মন্ত্রী-উপমন্ত্রীর সরকারি খরচে রেল ভ্রমণ ও বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ রয়েছে। যে সরকারি বাসভবনটি তারা পেয়ে থাকেন তার গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি, টেলিফোনসহ যাবতীয় রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় সরকার বহন করে। মন্ত্রীরা সরকারি বাসায় সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা মূল্যের আসবাবপত্র পেয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে প্রতিমন্ত্রী পান ৪ লাখ টাকা মূল্যের আসবাবপত্র। একইসঙ্গে সরকারি বাসায় না থাকলে মন্ত্রীরা বাড়ি ভাড়া বাবদ ৮০ হাজার টাকা, প্রতিমন্ত্রী পান ৭০ হাজার টাকা।
এছাড়াও তারা সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা প্রহরী, নিজের এবং পরিবারের সদস্যদের ভ্রমণ খরচসহ অন্যান্য সুবিধা পেয়ে থাকেন। আবার যারা মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন, তারা আরও কিছু অতিরিক্ত সুবিধা পেয়ে থাকেন।
অপরদিকে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী উভয়ের জন্যই একজন করে উপ-সচিব পদমর্যাদার একান্ত সচিব, সহকারী সচিব পদমর্যাদার সহকারী একান্ত সচিব এবং ক্যাডারের বাইরে থেকে সহকারী একান্ত সচিব থাকেন। আরও থাকেন একজন জমাদার ও একজন আর্দালি, দুইজন এমএলএসএস, একজন পাচক বা পিয়ন।