মেরাজ পালন করা সম্পর্কে ইসলামের বিধান কি?

‘শব’ ফার্সি শব্দ। এর অর্থ রাত। আর ‘মেরাজ’ আরবি শব্দ। এর অর্থ ঊর্ধ্বগমন। যেহেতু আল্লাহ তায়ালার ডাকে সাড়া দিয়ে আল্লাহর রাসুল এক রাতে ঊর্ধ্বজগতে ভ্রমণ করেছিলেন তাই সেই রাতকে শবে মেরাজ বলা হয়। আরবি ভাষায় একে লাইলাতুল মেরাজ বলা হয়। শবে মেরাজকে কেন্দ্র করে আমাদের বাংলাদেশি সমাজে বেশ কিছু প্রচলনসহ বিশেষ নামাজ ও রোজা রাখার প্রথাও প্রচলিত রয়েছে। শবে মেরাজ উপলক্ষে কোনো নামাজ বা রোজার বিধান কি আসলেই ইসলামে রয়েছে? এ সম্পর্কে ইসলাম কী বলে?

নিঃসন্দেহে ইসরা ও মেরাজ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর রিসালাতের সত্যতার পক্ষে ও আল্লাহ্‌র কাছে তাঁর মহান মর্যাদার সপক্ষে আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে মহান নিদর্শনাবলির অন্যতম। একইভাবে এটি আল্লাহ্‌র মহা ক্ষমতা ও তিনি তাঁর সকল সৃষ্টির ঊর্ধ্বে থাকার একটি বড় প্রমাণ। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “পবিত্র মহিমাময় তিনি, যিনি তাঁর বান্দাকে রাত্রিকালে মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসাতে ভ্রমণ করিয়েছেন; যে মসজিদের চারপাশে আমরা বরকত দিয়েছি; যাতে করে আমরা তাকে আমাদের নিদর্শনাবলি দেখাতে পারি। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা।”[সূরা বনী ইসরাইল, আয়াত: ১]

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাই‌হি ওয়াসাল্লা‌মের জীব‌নে এক‌টি রজনী এমন গত হ‌য়ে‌ছে, যাতে তি‌নি প্রথ‌মে মক্কা থে‌কে বাইতুল মুকাদ্দাস গি‌য়ে‌ছেন। যা‌কে কুরআ‌নের ভাষায় 'ইসরা' ব‌লে। এ পর্যন্ত বিশ্বাস করা ফরয; অস্বীকার কুফর। কারণ এ‌ অংশ কুরআন মাজীদ দ্বারা প্রমা‌ণিত। এটা‌কে অস্বীকার করার অর্থ কুরআন‌কে অস্বীকার করা। আর কুরআন অস্বীকার করা কুফর। তারপর সেখান থে‌কে ‌তি‌নি সশরী‌রে আসমা‌নে উর্ধ্বজগ‌তে প‌রিভ্রমণ করে‌ছি‌লেন। এর নাম 'মিরাজ'। এটিও বিশ্বাস করা জরু‌রি। ত‌বে এ অং‌শে স‌ন্দেহ পোষণ করা ইলহাদ ও যিন্দীকী, তথা ধর্ম‌দ্রোহীতা হ‌বে।

তি‌নি ঠিক কত তা‌রি‌খে ইসরা ও মিরা‌জে গমন করে‌ছি‌লেন, বিশ্বা‌সের জন্য তা নির্ধারণ করা জরু‌রি নয়। ত‌বে ২৭রজব বেশ প্র‌সিদ্ধ। রজব মাসের সাতাইশ তারিখকে শবে মেরাজ পালনের জন্য নির্ধারণ করে নিয়েছে।

এ উপলক্ষে এরা একটি নয়, একাধিক বিদআত তৈরি করেছে। বাংলাদেশসহ উপমহাদেশে শবে মেরাজকে কেন্দ্র ক‌রে গ‌ড়ে ও‌ঠে‌ছে বহু ভি‌ত্তিহীন কাজকর্ম। যেমন :

১) প্র‌তিবছর এ‌টি‌কে একবার ক‌রে উদযাপন বা স্মরণ করা।

২) এ‌টাকে লাইলাতুল কদর বা লাইলাতুল বরাআত এর ম‌তো ম‌হিমা‌ন্বিত ও ফযীলতপূর্ণ ম‌নে করা।

৩) এ তা‌রি‌খে দি‌নের বেলা রোযা রাখা।

৪) এ রা‌তে ইবাদত ব‌ন্দেগী অন্য রা‌তের চে‌য়ে বে‌শি করা।

৫) এ রা‌তে বি‌শেষ নামায আ‌ছে ম‌নে করা।

৬) এ রা‌তে মস‌জি‌দে জমা‌য়েত হওয়া।

৭) এ রা‌ত উপল‌ক্ষে মস‌জি‌দে ওয়াজ-মাহ‌ফি‌লের আ‌য়োজন করা।

৮) মি‌ষ্টি জিলাপী বিতর‌ণের আ‌য়োজন করা।

৯) ভা‌লো খাবার-দাবা‌রের ব্যবস্থা করা,

এগুলো সবই গোমরাহী এবং বাতিল কর্ম কাণ্ড। এ প্রসঙ্গে কুরআন-সুন্নাহতে নূন্যতম কিছু বর্ণিত হয় নি। তবে এ এভাবে দিবস পালন না করে যে কোন সময় মিরাজের ঘটনা বা শিক্ষা নিয়ে আলোচনা করা দোষণীয় নয়। নবী‌জির কো‌নো সবল কিংবা দুর্বল হাদীস দ্বারা এর কো‌নো‌ একটি প্রমা‌ণিত নয়। রজব মাসের প্রথম জুমায় সালাতুর রাগায়েব প্রসঙ্গে যেসব হাদিস বর্ণিত হয়েছে সেগুলো ভিত্তিহীন, মিথ্যা ও বানোয়াট।’ 

যে রাতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইসরা ও মেরাজ সংঘটিত হয়েছিল সেটি নির্ধারণের ক্ষেত্রে পূর্ব যুগ থেকেই ওলামাগণের মাঝে মত পার্থক্য রয়েছে। অর্থাৎ এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট কোন হাদীস না থাকায় আলেমগণ বিভিন্ন জন বিভিন্ন মতামত ব্যক্ত করেছেন।
মিরাজ যেমন আমা‌দের নবী‌জির জন্য সম্মান ও মর্যাদার, তেম‌নি আমা‌দের জন্য অ‌নেক অ‌নেক গৌর‌বের। এ‌টি আল্লাহ তাআলার এক মহা নিদর্শন। ইসলাম ও মুস‌লিম উম্মাহর ই‌তিহা‌সে এ‌টি এক‌টি স্মরণীয় তা‌রিখ। এবং নবী‌জির জীব‌নের এ‌টি এক জ্বলজ্ব‌লে অধ্যায়।

অধিকাংশ আলেমের মতে, শবে মেরাজ উপলক্ষে নামাজ বিদআত। পরবর্তী যুগের আলেমগণের মধ্যে যারা এই মত ব্যক্ত করেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন আবু ইসমাঈল আনসারি, আবু বকর সামআনি, আবুল ফযল ইবনে নাসির ও আবুল ফারায ইবনে জাওযি (রহ.)সহ আরও অনেক আলেম। পূর্ববর্তী যুগের আলেমগণ এ ব্যাপারে আলোকপাত করেননি। কেননা এই বিদআত হিজরি চতুর্থ শতাব্দির পর প্রকাশ পেয়েছে। নবী করিম (সা.) এবং সাহাবায়ে কেরাম থেকে রজব মাসের রোজা সম্পর্কেও বিশুদ্ধ কোনো হাদিস বর্ণিত নেই।  এই বিদাতটি দেশে দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এমনকি লোকেরা ধারণা করছে এটি ধর্মীয় কাজ। আমরা আল্লাহ্‌র কাছে প্রার্থনা করছি তিনি যেন মুসলিম উম্মাহর অবস্থা পরিবর্তন করে দেন এবং তাদেরকে দ্বীনি বিষয়ে প্রজ্ঞা দান করেন। আমাদেরকে ও তাদেরকে সত্যকে আঁকড়ে ধরার ও সত্যের উপর অবিচল থাকার এবং সত্যের বিরোধিতা বর্জন করার তাওফিক দেন। নিশ্চয় তিনি সে ক্ষমতা রাখেন। আল্লাহ্‌ তাঁর বান্দা ও রাসূল, আমাদের নবী মুহাম্মদের উপর তাঁর রহমত ও শান্তি বর্ষন করুন।

অনেককে শবে মেরাজ উপলক্ষে বিশেষ নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদে সমবেত হতে দেখা যায়। বহু নারীও সেই রাতে নামাজ আদায় করার পদ্ধতি কী জানতে চান। বহু মুসলমান এই রাত উপলক্ষে মেরাজের রোজা রাখতে চান বা রাখার বিধান জানতে চান। অনেকেই শবে মেরাজের নামাজ বা রোজাকে বিশেষ ফজিলতপূর্ণ মনে করেন। নামাজ আদায় করা ও রোজা রাখা অবশ্যই পুণ্যের কাজ। কিন্তু শবে মেরাজ উপলক্ষে বিশেষ কোনো নামাজ ও রোজার বিধান ইসলামি শরিয়তে নেই। এ ব্যাপারে আল্লামা ইবনে রজব হাম্বলি (রহ.) তৎপ্রণীত লাতায়েফ ও মাআরেফ গ্রন্থে বলেন, ‘রজব মাসের সঙ্গে সম্পর্কিত বিশেষ কোনো নামাজ নেই। রজব মাসের প্রথম জুমায় সালাতুর রাগায়েব প্রসঙ্গে যেসব হাদিস বর্ণিত হয়েছে সেগুলো ভিত্তিহীন, মিথ্যা ও বানোয়াট।’ 

শ‌বে মেরাজ বা লাইলাতুল ইসরা। আমা‌দের প্রিয় নবী‌জি সা. এর জীব‌নে ঘটা এক অ‌বিষ্মরণীয় ঐ‌তিহা‌সিক রজনী। যে রা‌তে আমা‌দের নবী‌জি সা. উর্ধ্বজগত ভ্রমণ করে‌ছি‌লেন। এ‌টি আমা‌দের নবী‌জির জন্য মহা সম্মানের,‌ আমাদের জন্য মহা‌ গৌরবের। কিন্তু এ রা‌তের সা‌থে আমা‌দের দে‌শে ক‌তেক অবাস্তব ও ভি‌ত্তিহীন প্রথা জ‌ড়িত র‌য়েছে। মানুষ দী‌নের না‌মে এগু‌লো পালন ক‌রে প্রতা‌রিত হ‌চ্ছে। অথচ এগু‌লো পাল‌নের কো‌নো ভি‌ত্তি নেই। এগু‌লো‌কে দীনী কাজ বলা যা‌বে না। এসব ভি‌ত্তিহীন আমল পালন কর‌লে সওয়াব হওয়া তো দূ‌রের কথা, বরং গোনাহগার হ‌বে। আল্লাহ রাসূ‌লের কা‌ছে জবাব‌দীহী কর‌তে হ‌বে। আসুন জে‌নে নিই, এ রা‌ত্রি কে‌ন্দ্রিক কোন‌টি বাস্তব আর কোন‌টি অবাস্তব।

শবে মিরাজ উপলক্ষে সুনির্দিষ্ট কোনো নামাজ আল্লাহর রাসুলের হাদিসের মাধ্যমে অথবা সাহাবিদের আমলের মাধ্যমে অথবা তাবেয়িদের আমলের মাধ্যমে সাব্যস্ত হয়নি। এ রাতের কোনো ইবাদত আল্লাহর রাসুলের কোনো হাদিসের মাধ্যমে সাব্যস্ত হয়নি। ভিন্ন কোনো নামাজ, বিশেষ কোনো নামাজ আদায় করার কোনো প্রয়োজন নেই। অন্যান্য রাতের মতোই এ রাতে নফল নামাজ, তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতে পারেন। সেটা স্বাভাবিক নিয়ানুযায়ী আগে যেভাবে আদায় করতেন সেভাবেই আদায় করতে পারবেন। এতে কোনো অসুবিধা নেই। আল্লাহ এবং তার রাসুল (সা.) শবে মেরাজ উপলক্ষে বিশেষ কোনো নামাজ আদায় করা, রোজা রাখা, খাওয়া-দাওয়া করা এবং রাত জেগে ইবাদত করার কোনো হুকুম আমাদের দেন নাই।

শবে মেরাজ উপলক্ষে নফল রোজা রাখার কোনো বর্ণনা কোরআন-হাদিসের কোথাও নেই। আল্লাহর রাসুল ও তার অনুসারীরা এই দিনে বিশেষভাবে কোনো রোজা রেখেছেন এমনে কোনো বর্ণনা ইতিহাসে খুঁজে পাওয়া যায় না। তাই এই দিনে শবে মেরাজ উপলক্ষে রোজা রাখা কোনো ইবাদত হিসেবে গণ্য হবে না। 

ইবনে হাজার আসকালানী রহ. বলেন: মিরাজের সময় নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। কেউ বলেছেন, নবুওয়তের আগে। কিন্তু এটা একটি অপ্রচলিত মত। তবে যদি উদ্দেশ্য হয়, যে সেটা স্বপ্ন মারফত হয়েছিল সেটা ভিন্ন কথা অধিকাংশ আলেমগণের মত হল, তা হয়েছিল নবুওয়তের পরে। তবে নবুওয়তের পরে কখন সেটা নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে।

কেউ বলেছেন: হিজরতের এক বছর আগে। ইবনে সা’দ প্রমুখ এ মতের পক্ষে। ইমাম নওবী রহ. এই মতটির পক্ষে জোর দিয়ে বলেছেন। তবে ইবনে হাজাম এর পক্ষে আরও শক্ত অবস্থান নিয়ে বলেন: এটাই সর্ব সম্মত মত। এই মতের আলোকে বলতে হয় মেরাজ হয়েছিল রবিউল আওয়াল মাসে। কিন্তু তার কথা অগ্রহণ যোগ্য। কারণ, এটা সর্ব সম্মত মত নয়। বরং এক্ষেত্রে প্রচুর মতবিরোধ রয়েছে। এ প্রসঙ্গে বিশটির অধিক মত পাওয়া যায়।

ইবনুল জাওযী বলেন, হিজরতের আট মাস আগে মেরাজ হয়েছিল। এ মতানুসারে সেটা ছিল রজব মাসে। কেউ বলেন: হিজরতের ছয় মাস আগে। এ মত অনুযায়ী সেটা ছিল রামাযানে। এ পক্ষে মত দেন আবুর রাবী বিন সালেম।

আরেকটি মত হল, হিজরতের এগার মাস আগে। এ পক্ষে দৃঢ়তার সাথে মত ব্যক্ত করেন, ইবরাহীম আল হারবী। তিনি বলেন: হিজরতের এক বছর আগে রবিউস সানীতে মিরাজ সংঘটিত হয়।

কারো মতে, হিজরতের এক বছর তিন মাস আগে। ইবনে ফারিস এ মত পোষণ করেন। এভাবে আরও অনেক মতামত পাওয়া যায়। কোন কোন মতে রবিউল আওয়াল মাসে, কোন মতে শাওয়াল মাসে, কোন মতে রামাযান মাসে, কোন মতে রজব মাসে। আর তাই শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন: ‘ইবনে রজব বলেন: রজব মাসে বড় বড় ঘটনা ঘটেছে মর্মে বিভিন্ন বর্ণনা পাওয়া যায় কিন্তু কোনটির পক্ষেই সহীহ দলীল নাই। বর্ণিত হয়েছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রজবের প্রথম রাতে ভূমিষ্ঠ হয়েছেন, সাতাইশ বা পঁচিশ তারিখে নবুওয়ত প্রাপ্ত হয়েছেন অথচ এ সব ব্যাপারে কোন সহীহ দলীল পাওয়া যায় না।‘ (লাতাইফুল মায়ারেফ, ১৬৮ পৃষ্ঠা)

আবু শামাহ বলেন: ‘গল্পকারেরা বলে থাকে যে, ইসরা ও মিরাজের ঘটনা ঘটেছিল রজব মাসে। কিন্তু ইলমে জারহ ওয়াত তাদীল সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ আলেমগণের মতে এটা ডাহা মিথ্যা।‘ (আল বায়িস: ১৭১)


সালফে সালেহীনগণ এ মর্মে একমত যে, ইসলামী শরীয়তে অনুমোদিত দিন ছাড়া অন্য কোন দিবস উদযাপন করা বা আনন্দ-উৎসব পালন করা বিদআত। কারণ, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: ‘যে ব্যক্তি দ্বীনের অর্ন্তভুক্ত নয় এমন নতুন জিনিষ চালু করল তা পরিত্যাজ্য।‘ (বুখারী, অধ্যায়: সন্ধি-চুক্তি)

আর সহীহ মুসলিমের বর্ণনায় রয়েছে: ‘যে ব্যক্তি এমন আমল করল: ‘যার প্রতি আমার নির্দেশ নেই তা প্রত্যাখ্যাত।‘ (মুসলিম হা/১৭১৮; মিশকাত হা/১৪০)।

সুতরাং মিরাজ দিবস অথবা শবে মেরাজ পালন করা দ্বীনের মধ্যে সৃষ্ট বিদআতের অর্ন্তভূক্ত সাহাবীগণ, তাবেঈনগণ বা তাদের পদাঙ্ক অনুসরণকারী সালফে সালেহীনগণ তা পালন করেন নি। অথচ সকল ভাল কাজে তারা ছিলেন আমাদের চেয়ে অনেক বেশি অগ্রগামী।

ইবনুল কাইয়েম জাওযিয়া রহ. বলেন: পূর্ববর্তী যুগে এমন কোন মুসলমান পাওয়া যাবে না যে শবে মেরাজকে অন্য কোন রাতের উপর মর্যাদা দিয়েছে। বিশেষ করে শবে কদরের চেয়ে উত্তম মনে করেছে এমন কেউ ছিল না। সাহাবায়ে কেরাম এবং তাদের একনিষ্ঠ অনুগামী তাবেঈনগণ এ রাতকে কেন্দ্র করে বিশেষ কোন কিছু করতেন না এমনকি তা আলাদাভাবে স্মরণও করতেন না। যার কারণে জানাও যায় না যে, সে রাতটি কোনটি।

নি:সন্দেহে ইসরা ও মিরাজ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদার প্রমাণ বহন করে। কিন্তু এজন্য এর মিরাজের স্থান-কালকে কেন্দ্র করে বিশেষ কোন ইবাদত করার বৈধ নয়। এমনকি যে হেরা পর্বতে ওহী নাযিলের সূচনা হয়েছিল এবং নবুওয়তের আগে সেখানে তিনি নিয়মিত যেতেন নবুওয়ত লাভের পর মক্কায় অবস্থান কালে তিনি কিংবা তাঁর কোন সাহাবী সেখানে কোন দিন যান নি। তারা ওহী নাজিলের দিনকে কেন্দ্র করে বিশেষ কোন ইবাদত-বন্দেগী করেন নি বা সেই স্থান বা দিন উপলক্ষে বিশেষ কিছুই করেন নি।
যারা এ জাতীয় দিন বা সময়ে বিশেষ কিছু এবাদত করতে চায় তারা ঐ আহলে কিতাবদের মত যারা ঈসা আলাইহিস সালাম এর জন্ম দিবস (Chisthomas) বা তাদের দীক্ষাদান অনুষ্ঠান (Baptism) পালন ইত্যাদি পালন করে।

পরিশেষে বলব, যেহেতু রজব মাসে নফল নামায, রোযা করা, মসজিদ, ঘর-বাড়ি, রাস্তা-ঘাট দোকান-পাট ইত্যাদি সাজানো, সেগুলোকে আলোক সজ্জা করা কিংবা ছাব্বিশ তারিখের দিবাগত রাত তথা সাতাইশে রজবকে শবে মিরাজ নির্ধারণ করে তাতে রাত জেগে ইবাদত করার ব্যাপারে কোন গ্রহনযোগ্য প্রমাণ নাই। তাই আমাদের কর্তব্য হবে সেগুলো থেকে দূরে থাকা। অন্যথায় আমরা বিদয়াত করার অপরাধে আল্লাহ তায়ালার দরবারে গুনাহগার হিসেবে বিবেচিত হব। অবশ্য কোন ব্যক্তি যদি প্রতি মাসে কিছু নফল রোযা রাখে সে এমাসেও সেই ধারাবাহিকতা অনুযায়ী এ মাসে রোযা রাখতে পারে, শেষ রাতে উঠে যদি নফল নামাযের অভ্যাস থাকে তবে তবে এ মাসের রাতগুলিতেও নামায পড়তে পারে।