রওশন এরশাদ, পড়লেন বাদ, নিচ্ছেন না নির্বাচনের স্বাদ

অবশেষে জাপা গেলো নির্বাচনে আর বিএনপি গেলো নির্বাসনে !

সিদ্দিকুর রহমান নির্ঝর : নানান জল্পনা-কল্পনা, আওয়ামী লীগের সাথে মন কষাকষি, দুই দলের রেষারেষি সবশেষে দর কষাকষির পর বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি গেলো আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। অপরদিকে সরকারী দল নিজস্ব বিভিন্ন দাবি-দাওয়া না মানায় বিএনপি সংসদ নির্বাচন থেকে স্বেচ্ছায় চলে গেলো নির্বাসনে।

এদিকে, জাপার পৃষ্টপোষক রওশন এরশাদ, এবার নিচ্ছেন না নির্বাচনের স্বাদ। দেবর গো. মো. কাদের তাঁকে শেষ বয়সে এসে পার্টি থেকে দিলেন বাদ। এ নিয়ে ভাবী রওশন প্রধানমন্ত্রী শেষ হাসিনার কাছে গিয়ে দিলেন দেবরকে অপবাদ। রওশন জানালেন, কিভাবে আপন ভাতিজা শাদ এরশাদকে সরিয়ে ওই আসনে নির্বাচন করছেন চাচা? একেই কি তাহলে বলে চাচা আপন প্রাণ বাঁচা ? এসব ক্ষোভ থেকে তাঁর অনুরোধ দেবরকে নিয়ে হাসিনা যেনো না করেন জোট। তাহলে দেবর কাদের পাবেন না জনগনের ভোট। কিন্তু মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিনে শেখ হাসিনার সাথে কাদেরের হয়ে গেলো সমঝোতা। এ নিয়ে এখন ভাবী রওশনের নিশ্চয়ই অনেক ব্যথা। অবশ্য পাওয়া যায়নি এখনও রওশন এরশাদের এ বিষয়ে কোন কথা।

মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে (১৭ ডিসেম্বর) জাতীয় পার্টির পছন্দের নির্দিষ্ট সংখ্যক আসন ছেড়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। তারা নিশ্চিত করেছে যে, ওইসব আসনে নৌকার প্রার্থী থাকবে না। এদিকে, বিএনপি তাদের আন্দোলন হরতাল, অবরোধ, মানব বন্ধন ইত্যাদি চালিয়ে যাবার প্রতিশ্রুতিতে অটল থেকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে স্বেচ্ছায় নির্বাসিত থাকলো।

জাতীয় পার্টির (জাপা) জন্য ২৬টি এবং ১৪ দলীয় জোটের অন্য শরিকদের জন্য ৬টি সংসদীয় আসন ছাড় দিলো আওয়ামী লীগ। রোববার (১৭ ডিসেম্বর) নির্বাচন কমিশনে (ইসি) গিয়ে সাংবাদিকদের এ কথা জানান আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া।

এবারের নির্বাচনে আসন ভাগাভাগি করতে জাপা ও আওয়ামী লীগের মধ্যে বেশ কয়েকদিন ধরে বৈঠক চলছিল। একবারে শেষ দিনে অর্থাৎ ১৭ ডিসেম্বরে নমিনেশন প্রত্যাহার করার দিনেও জাপার ইলেকশন থেকে বিরত থাকার অভিপ্রায় ছিল। আর সেটা আসন ভাগাভাগি নিয়ে। এরমধ্যে জাতীয় পার্টির নেতাদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা তৈরি হয়। কে থাকছেন ‘সমঝোতার টিক মার্কের’ তালিকায়। তারই অংশ হিসেবে গত শনিবার বিকেল থেকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতা নিয়ে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে জাপার শীর্ষনেতারা।  মূলত ৬ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতার প্রথম বৈঠকে ৫০ জনের একটি তালিকা দেয় দলটি। কিন্তু ২৬টির বেশি আসন দেয়া হবে না বলে জাপাকে সাফ জানিয়ে আওয়ামী লীগ। আর এতেই ফুঁসে ওঠেন দলটির শীর্ষনেতারা।

আসন ভাগাভাগির এই দেন দরবারে ২৬টি আসনের বাইরে দলের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতার নাম টিক মার্কের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা নিয়েই আওয়ামী লীগের সঙ্গে বার বার আলোচনা চলছিল। এরমধ্যে জাপা চেয়ারম্যানের স্ত্রী ও দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেরীফা কাদের,  আবু হোসেন বাবলা ও কাজী ফিরোজ রশীদ। শেষ পর্যন্ত শেরীফা কাদেরের আসনের নিশ্চয়তা পেয়ে সন্তুষ্টচিত্তে নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেয় দলটি। যদিও তালিকায় প্রথম থেকে নাম থাকলেও শেষের দিকে এসে ছিটকে পড়েন কাজী ফিরোজ রশীদ ও আবু হোসেন বাবলা, যমুনা গ্রুপের কর্ণধার ও জাপার কো চেয়ারম্যান সালমা ইসলাম।

 এদিকে, ১৭ ডিসেম্বর জাতীয় প্রেস ক্লাবে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ আয়োজিত বিজয় দিবসের আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, দেশে খেলা চলছে, নির্বাচনী খেলা। এ খেলায় কারা এমপি হচ্ছেন তা আগামীকাল সোমবারের মধ্যেই ঠিক হয়ে যাবে। নির্বাচনী খেলা বাদ দিয়ে এখনই তা ঘোষণা করে দিলে রাষ্ট্রের টাকা অপচয় হয় না। নজরুল ইসলাম প্রশ্ন রেখে বলেন, সরকারবিরোধী কোনো রাজনৈতিক দল কি অংশ নিচ্ছে এই নির্বাচনে। একটাও না। হয় সরকারি দল, না হয় ১৪ দলীয় জোট না হয় মহাজোট অথবা তাদের অনুগত কোন রাজনৈতিক দল অংশ নিচ্ছে এ নির্বাচনে। আরও ভালো হতো যদি কোনো আসনে চারজন প্রার্থী থাকে তবে ব্যালটে ৪টা বিভিন্ন আকৃতিক নৌকার প্রতীক থাকতো, যেটাতে পছন্দ হয় সেটাতে তারা ভোট দিলেই হতো। যেখানে ভূমিহীন মানুষ কষ্ট করছে, সেখানে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা কেন খরচ করা হচ্ছে এমন একটা প্রহসনের নির্বাচনে। ঘোষণা করে দিলেই হয় কে কোন আসনের এমপি।

এক রাতেই সব নেতার মুক্তির প্রস্তাবেও রাজি হয়নি বিএনপি-কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাকের এমন বক্তব্যের জবাবে নজরুল ইসলাম খান বলেন, বিএনপি এই খেলায় কখনও অংশ নেয় না। আমরা কখনও দাবিও করিনি আপনারা পদত্যাগ করেন আমরা ক্ষমতা নেবো। আমরা বলেছি আপনারা পদত্যাগ করুন। নিরপেক্ষ নির্বাচন দিন জনগণ যাকে ভোট দেবে তারা সরকার গঠন করবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, জাতীয় পার্টি নির্বাচন থেকে সরে যাবে বা শরিকদের অনেকেই শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকবেন না এমন গুঞ্জন ছিল। এ নিয়ে এক ধরনের স্নায়বিক দ্বন্দ্ব কাজ করেছে। রাজনৈতিক কৌশলের খেলায় শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ জয়ী হয়েছে। 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা আরও বলছেন , আওয়ামী লীগকে এখন ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে অন্তত ৪০ শতাংশ ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে সারা দেশে। কারণ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন বলতে যে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড তাতে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ ভোটার উপস্থিত থাকা বাঞ্ছনীয়। শুধু তাই নয়, পাশাপাশি আওয়ামী লীগকে নিশ্চিত করতে হবে যে নির্বাচন যেন পক্ষপাতহীন হয় এবং সকল পক্ষ যেন সমান সুযোগ সুবিধা পায়। প্রশাসনের নিরপেক্ষতা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর নিরপেক্ষ অবস্থান নিশ্চিত করতে পারে সুষ্ঠু নির্বাচন। এর একটি ব্যত্যয় হলে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা সহ নানা রকম চাপের খড়গ ঝুলে আছে আওয়ামী লীগের সামনে।