করতে গিয়ে আসন ভাগাভাগি, বাদ পড়ছেন আ‘লীগের তিন ডজন ত্যাগী !
সিদ্দিকুর রহমান নির্ঝর : বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তাদের শরীকদের সাথে করতে গিয়ে আসন ভাগাভাগি, নিজ দলের মনোনয়ন থেকে বাদ পড়তে পারেন অনেক বড় বড় ত্যাগী। কারণ এসব ত্যাগী নেতারা দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করলেও নির্বাচনের খাতিরে তাঁদেরকে এবার হয়তো সরে দাঁড়াতে হবে। ইলেকশন থেকে যাদের বসিয়ে দেয়া হতে পারে তাঁদের সংখ্যা প্রায় তিন ডজনের কাছাকাছি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে খবর পাওয়া গেছে।
সূত্র জানায়, এ পর্যায়ে এসে আওয়ামী লীগের সাথে জাতীয় পার্টি, শরীক ১৪ দলের সাথে আসন ভাগাভাগি নিয়ে চলছে দর কষাকষি। শেষ পর্যন্ত যদি আওয়ামী লীগ রাজি হয় তাহলে হয়তো তাদের দলের প্রায় তিন ডজন মনোনয়ন প্রত্যাশীদের নির্বাচন থেকে সরে যেতে হবে। জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের কাছে অন্তত ৫০টি আসন চাচ্ছে। নৌকা প্রতীকের বদলে জাতীয় পার্টি তার লাঙ্গল প্রতীক দিয়ে নির্বাচন করবে বলে শর্ত দিয়েছে আ‘লীগকে। তবে আওয়ামী লীগ ২০টি আসন দিতে আপাতত রাজি আছে। অবশ্য এ নিয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। জাপার কিছু কিছু গুরুত্বপূর্ণ নেতার আসন ছেড়ে দেওয়ার ব্যাপারে আওয়ামী লীগ একমত। ঐ নেতা জনপ্রিয় হোক না হোক, মহাজোটের স্বার্থে সেই আসনগুলো ছেড়ে দেওয়া হবে। তবে শুধুমাত্র সমঝোতার খাতিরে অযোগ্য এবং জনগণের সঙ্গে সম্পর্কহীন প্রার্থীদের জন্য আসন ছেড়ে দেওয়া হবে না। জাতীয় পার্টি চাইছে, যে সমস্ত জাতীয় পার্টির আসনে নৌকা প্রতীক ছেড়ে দেওয়া হবে, সেই সমস্ত আসনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত বা আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থীদেরকেও বসে যেতে হবে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সেটাতে একমত হচ্ছে না। অর্থাৎ জাতীয় পার্টি তাদেরকে ছোড়ে দেওয়া আসনে শিতভাগ জয়েলাভের নিশ্চয়তা চাইছে আওয়ামী লীগের কাছে। তবে আওয়ামী লীগ সাফ জানিয়ে দিয়েছে যে, নির্বাচনে আওয়ামী লীগ কাউকেই জয়ী করার দায়িত্ব নেবে না।
এদিকে, ১৪ দলের শরীকরা ‘নৌকা’ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে চায়। তারাও চাচ্ছে বেশকিছু আসন। উভয় দলের নেতারাই বলছেন, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে তারা সমঝোতায় পৌছতে পারবেন। সমঝোতা হলে জাতীয় পার্টির আসন গুলোতে ‘নৌকা’র প্রার্থী থাকবে না । শরিকদের মধ্যে বর্তমানে যাদের সংসদ সদস্য আছে, তাদেরই বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে। অন্যদের বিষয়ে খুব একটা তাগিদ নেই আওয়ামী লীগের।
উল্লেখ্য যে, আওয়ামী লীগ, জাসদ-ইনু, ন্যাপ (মোজাফফর) এবং বাম জোট ও আরও ১১ দল মিলে এ জোট গঠিত হয়। ১১ দলে আছে সিপিবি, ওয়ার্কার্স পার্টি, গণফোরাম, সাম্যবাদী দল, বাসদ (খালেকুজ্জামান), বাসদ (মাহবুব), গণতন্ত্রী পার্টি, গণআজাদী লীগ, কমিউনিস্ট কেন্দ্র, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি ও শ্রমিক কৃষক সমাজবাদী দল।
বর্তমান সংসদে ১৪ দলের শরিকদের মধ্যে প্রতিনিধিত্ব আছে ওয়ার্কার্স পার্টির তিনটি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) তিনটি এবং তরীকত ফেডারেশন ও জাতীয় পার্টির (জেপি) একটি করে আসন। অর্থাৎ সব মিলিয়ে আটটি আসন রয়েছে তাদের। ৪ ডিসেম্বর ১৪ দলের সাথে আসন ভাগাভাগি নিয়ে বৈঠকে বসছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। শরিকেরা ইতিমধ্যে যেসব আসন প্রত্যাশা করছেন এবং এর মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্ব কোন কোন আসনে—সেই সংক্রান্ত তালিকা জমা দিয়েছেন। ৪ ডিসেম্বরের বৈঠকে এই তালিকা জোটের সমন্বয়ক উপস্থাপন করা হবে। এরপর শেখ হাসিনা তালিকা বিশ্লেষণ করে পরে সিদ্ধান্ত জানাবেন। কালকের বৈঠকেই আসন সমঝোতা চূড়ান্ত করা হবে, এমনটা নয়। তবে ১৪ দলে যারা মনোনয়ন পাবেন না, তাদেরকেও বিভিন্ন ধরনের পুরস্কারে ভূষিত করা হবে বলে সমঝোতা-আলোচনায় আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগের যে সমস্ত প্রার্থীকে শেষ মুহূর্তে নির্বাচন থেকে সরে যেতে হবে বা শরিকদের জন্য ছাড় দিতে হবে সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগ যথাযথভাবে মূল্যায়ন করবে বলেও আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে। তাদেরকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছে দল এবং ভবিষ্যতে তাদের জন্য বড় ধরনের সুযোগ অপেক্ষা করছে এমন বার্তাও দেওয়া হচ্ছে। যেমন, সুনামগঞ্জের একজন আমলাকে যদি ত্যাগ স্বীকার করতে হয়, তাহলে সেক্ষেত্রে তিনি ‘উপদেষ্টা’ হতে পারেন- এমন আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে।
নিচে উল্লেখিত আসনগুলো ছাড়াও আরো কয়েকটি আসনে জাতীয় পার্টির সাথে সমঝোতা হতে পারে। আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিতে পারে, এমন সম্ভাব্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ আসন হচ্ছে:
- (সুনামগঞ্জ-৪), এই আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী পীর ফজলুর রহমানকে ছেড়ে দিতে পারে আওয়ামী লীগ। এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী পি এস সির সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক।
- (গাইবান্ধা-১), জাতীয় পার্টির ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীর জন্য এই আসনে আওয়ামী লীগ ‘নৌকা’ প্রতীক বরাদ্দ নাও দিতে পারে। এই আসনে আওয়ামী লীগ আফরোজা বারীকে মনোনয়ন দিয়েছে।
- (রংপুর-১), স্বতন্ত্র প্রার্থী মশিউর রহমান রাঙ্গার জন্য এই আসনটি নৌকা শূণ্য থাকতে পারে। এই আসনে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিয়েছে মো: রেজাউল করিম রাজুকে।
- কুষ্টিয়া-২ আসনটি জাসদের হাসানুল হক ইনুর জন্য খালি রেখেছে আওয়ামী লীগ। রাজশাহী-২ আসনটি ওয়াকার্স পার্টির ফজলে হোসেন বাদশার জন্য ছেড়ে দেয়া হতে পারে।
- (বরিশাল-২), ওয়াকার্স পার্টির নেতা রাশেদ খান মেননকে এই আসনে নৌকা প্রতীক দিতে পারে আওয়ামী লীগ। সেক্ষেত্রে বাদ যাবেন মনোনয়ন পাওয়া তালুকদার মো: ইউসুফ।
- (বগুড়া-২), জাতীয় পার্টির প্রার্থী শরীফুল ইসলাম জিন্নাহ’র জন্য এই আসনটি ছেড়ে দিতে পারে আওয়ামী লীগ। এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন তৌহিদুর রহমান মানিক।
- (রংপুর-৩), এই আসনে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিয়েছে তুষার কান্তি মন্ডলকে। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি.এম কাদেরের জন্য এই আসন থেকে আওয়ামী লীগ তার প্রার্থীকে প্রত্যাহার করতে পারে।
- (নীলফামারী-৩), এই আসনে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিয়েছে মো: গোলাম মোস্তফাকে। জাতীয় পার্টির প্রার্থী মেজর (অব:) সোহেল রানার জন্য এই আসনটিতে আওয়ামী লীগ ‘নৌকা’ প্রতীক বরাদ্দ দেবে না।
- (বরিশাল-৩), জাতীয় পার্টির গোলাম কিবরিয়া টিপুকে আওয়ামী লীগ এই আসনটি ছেড়ে দিতে পারে। এই আসনে আওয়ামী লীগ সরদার মো: খালেদকে মনোনয়ন দিয়েছিল।
- (কিশোরগঞ্জ-৩), এই আসনে জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নুকে ছেড়ে দিতে পারে। এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মো: নসিরুল ইসলাম খান।
- (ফেনী-৩) জাতীয় পার্টির লে: জেনারেল (অব:) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীকে আসনটি ছেড়ে দিতে পারে আওয়ামী লীগ। এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো: আবুল বাশার।
- (ঢাকা-৪) জাতীয় পার্টির সৈয়দ আবু হোসেন বাবলাকে আসনটি ছেড়ে দিতে পারে আওয়ামী লীগ। এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সানজিদা খানম।
- (নীলফামারী-৪), এই আসনে আওয়ামী লীগ দিয়েছে জাকির হোসেন বাবুলকে, জাপার আহসান আদেলুর রহমানের জন্য এই আসন নৌকা শূণ্য থাকতে পারে।
- (নারায়ণগঞ্জ-৫) আসনে আওয়ামী লীগ কোন প্রার্থী দেয়নি। জাতীয় পার্টির সেলিম ওসমানের জন্য আওয়ামী লীগ আসনটি খালি রেখেছে।
- (চট্টগ্রাম-৫), জাতীয় পার্টির নেতা আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে আসনটি ছেড়ে দিতে পারে আওয়ামী লীগ। ফলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহাম্মদ আবদুস সালাম নৌকা প্রতীক পাবেন না।
- (ঢাকা-৬) জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদকে এই আসনটি আওয়ামী লীগ ছেড়ে দিতে পারে। ফলে এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত সাঈদ খোকন মনোনয়ন পাবেন না।