বাংলাদেশে সীমিত করা হলো ফেসবুকের বিজ্ঞাপনী কার্যক্রম
বাংলাদেশে ফেসবুকসহ মেটা প্ল্যাটফর্মের বিজ্ঞাপনী কার্যক্রম সীমিত করা হয়েছে। এমনই একটি ঘোষণা দিয়েছে ফেসবুকের বাংলাদেশি সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভ এইচটিটিপুল। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে একটি চিঠির মাধ্যমে ডলার সংকট ও রেমিট্যান্স জটিলতার কারণে এমন সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের কারণে এইচটিটিপুলের মাধ্যমে আপাতত বাংলাদেশ থেকে ফেসবুক-সহ মেটার বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে বিজ্ঞাপন ক্যাম্পেইনের মূল্য পরিশোধ করা যাবে না বা এটি সীমিত থাকবে।
প্রসঙ্গত, এইচটিটিপুল হলো ফেসবুক তথা মেটার বাংলাদেশি সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভ। ফেসবুকে দেওয়া কোনও বিজ্ঞাপনের অর্থ ডলারে নয়, স্থানীয় মুদ্রা টাকায় এইচটিটিপুলের মাধ্যমে পরিশোধ করা যায়।
এইচটিটিপুলের এই ঘোষণায় দেশীয় প্রতিষ্ঠান এবং বিশেষ করে যারা কমপ্লায়েন্স থাকতে চায় তারা সমস্যায় পড়বে। এফ-কমার্স (ফেসবুক নির্ভর প্রতিষ্ঠান) হিসেবে পরিচিত ব্যবসাগুলো সাময়িক সমস্যায় পড়বে।
বিষয়টি সম্পর্কে জানার জন্য এইচটিপুলের বাংলাদেশ অফিসের কর্মকর্তাদের ফোন করে, মেসেজ পাঠিয়েও যোগাযোগ করা যায়নি। মেসেজের সাড়াও দেননি তারা।
এইচটিটিপুল বাংলাদেশ লিমিটেডের পরিচালক সানি নাগপাল স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক এই পরিস্থিতির ওপর তাদের কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। সমস্যার দ্রুত সমাধান করতে তারা ডিজিটাল মাধ্যমে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন। পরিষেবাটি চালু হওয়া মাত্র তারা বিষয়টি সবাইকে জানাবেন বলে চিঠিতে জানানো হয়।
এইচটিটিপুলের মাধ্যমে ফেসবুকের সেবা গ্রহণকারী অন্যতম প্রতিষ্ঠান বিডিজবসের প্রধান নির্বাহী ফাহিম মাশরুর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা এইচটিটিপুলের কাছ থেকে চিঠি পেয়েছি। এতে করে উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হবে। তিনি মনে করেন, এইচটিটিপুলের মাধ্যমে যেটা করা হয় সেটা বৈধ। অনেকে ফ্রিল্যান্সারদের মাধ্যমে বিভিন্ন উপায়ে ফেসবুক বা অন্যান্য মাধ্যমের বিজ্ঞাপনের অর্থ পরিশোধ করে থাকে। সেসব পথ অবৈধ। এইচটিটিপুলের এই জটিলতার কারণে আবার না সেই পথটাই উদ্যোক্তাদের বেছে নিতে হয়।
তিনি জানান, উবার, দারাজ, ফুডপান্ডা ইত্যাদির মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর কোনও সমস্যা হবে না। তারা ফেসবুকের বিজ্ঞাপন বিল তাদের মূল প্রতিষ্ঠান থেকে পরিশোধ করে থাকে। ফলে বেশি সমস্যায় পড়বে দেশি প্রতিষ্ঠানগুলো।
জানা গেছে, দেশের সফটওয়্যার ও সেবাপণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বেসিসের সদস্যদের জন্য কো-ব্র্যান্ডের ক্রেডিট কার্ড রয়েছে। সেই কার্ডের মাধ্যমে সাধারণত হোস্টিং, সফটওয়্যার লাইসেন্সের বিল পরিশোধ করা যায়। তবে কোথাও বলা নেই এই কার্ডের মাধ্যমে ফেসবুক বা অন্যান্য মাধ্যমের বিল পরিশোধ করা যাবে না।
বেসিস সদস্যরা সেই কার্ড ব্যবহার করেও এই সময়ে কাজ চালিয়ে নিতে পারবেন। এছাড়া ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) -এর সদস্যদের জন্য রয়েছে ইসলামী ব্যাংকের কো-ব্র্যান্ডেড প্রিপেইড কার্ড। এই কার্ড ব্যবহার করে ই-ক্যাব সদস্যরা ফেসবুকে তাদের বিজ্ঞাপন প্রচার করতে পারবেন।
ফেসবুক নির্ভর নারী উদ্যোক্তাদের প্ল্যাটফর্ম ওমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ট্রাস্ট’র (উই) প্রেসিডেন্ট নাছিমা আক্তার নিশা বলেন, আমরা এইচটিটিপুলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সমর্থ হয়েছি। তারা আমাদের জানিয়েছে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের কোনও সমস্যা হবে না।
তারা আগের মতোই ফেসবুকে কনটেন্ট বুস্ট করতে পারবেন, পেজ প্রমোশন করতে পারবেন। সেই বিলের অর্থ এইচটিটিপুলের মাধ্যমে পরিশোধ করা যাবে। বড় বড় এজেন্সি বা প্রতিষ্ঠানের বেলায় কিছুটা সমস্যা হতে পারে। তাদের জন্য বিষয়টা কঠিন করা হয়েছে। তবে এ সমস্যা সাময়িক। এই্চটিটিপুল দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করবে বলে তারা নাছিমা আক্তার নিশাকে আশ্বস্ত করেছেন বলে তিনি জানান।
তথ্যপ্রযুক্তি খাতে গুঞ্জন রয়েছে এইচটিটিপুল বাংলাদেশের কাছে ফেসবুক ৯ মাসের বিল পায়। ৯ মাসের বিল বকেয়া থাকার কারণেই মূলত ফেসবুক ‘বিজ্ঞাপন সীমিতকরণ’র এই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকতে পারে বলে সংশ্লিষ্টদের অভিমত। যদিও এ বিষয়ে অফিসিয়াল কোনও বক্তব্য জানা যায়নি।