যুক্তরাষ্ট্র থেকে চিনি কিনছে সরকার, কেজি প্রায় ৮৩ টাকা

যুক্তরাষ্ট্র থেকে চিনি কিনছে সরকার, কেজি প্রায় ৮৩ টাকা

যুক্তরাষ্ট্রের একটি কোম্পানির কাছ থেকে প্রতি কেজি ৮২ টাকা ৮৫ পয়সা দরে চিনি কিনছে সরকার। বাংলাদেশি মুদ্রায় ৬৬ কোটি ২৭ লাখ ৩১ হাজার টাকায় মোট কেনা হচ্ছে ১২ হাজার ৫০০ টন চিনি। যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিটির নাম এক্সেনচুয়েট টেকনোলজি ইনকরপোরেশন, ইউএসএ। আর এ কোম্পানির স্থানীয় এজেন্টের নাম ওএমজি লিমিটেড।

আজ বুধবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এ–বিষয়ক একটি প্রস্তাব অনুমোদিত হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

সাঈদ মাহবুব খান বলেন, চিনি কেনা হচ্ছে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতি অনুযায়ী। বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রতি কেজি চিনির দাম পড়বে ৮২ টাকা ৮৫ পয়সা।

যেসব দেশ নিষেধাজ্ঞা (স্যাংকশন) দেবে, তাদের কাছ থেকে বাংলাদেশ কোনো পণ্য কিনবে না বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত শনিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের ৬০তম কনভেনশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যারা নিষেধাজ্ঞা দেবে, তাদের থেকে কিছুই কিনব না।’

দুদিন পর গত সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে আবার বলেন, যারা (যেসব দেশ) বাংলাদেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেবে, সেসব দেশ থেকে কোনোরকম কেনাকাটা করবে না বাংলাদেশ। অর্থ মন্ত্রণালয়কে তিনি এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়ে দিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর বাংলাদেশের র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) এবং এর সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে নিষেধাজ্ঞা দেয়, যা এখনো বহাল।

প্রধানমন্ত্রীর এমন মনোভাব আজ অনুষ্ঠিত ক্রয় কমিটির বৈঠকে আলোচিত হয়েছে কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সাঈদ মাহবুব খান বলেন, ‘না, এ বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।’
ক্রয় কমিটির বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে চিনি কেনার অনুমোদন দেওয়ার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার লঙ্ঘন হলো কি না, আবার এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে মন্তব্য করার এখতিয়ার আমি রাখি না। কী পাস হলো আমি শুধু তা জানালাম।’

দেশে দেশে চিনির দাম

শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, বিশ্বের প্রায় সব দেশেই চিনির দাম বাংলাদেশের চেয়ে অনেক কম। দেশের খুচরা বাজারে চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি দরে। বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি) ব্যবসায়ীদের মুনাফাসহ হিসাব করে এর আগে চিনির দর ১০৪ থেকে ১০৯ টাকা হওয়া উচিত বলে সুপারিশ করেছিল। তবে তা কার্যকর না হয়ে বাজারে তখন ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি দরে চিনি বিক্রি হচ্ছিল।

ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত সপ্তাহে বিটিটিসি আবার সুপারিশ করে যে চিনির খুচরা দর হতে পারে ১২০ থেকে ১২৫ টাকা কেজি। এ সুপারিশও ব্যবসায়ীরা মেনে নেননি।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি গতকাল মঙ্গলবার এক সেমিনারের শেষে সাংবাদিকদের বলেছেন, কিছু অসৎ ব্যবসায়ী বেশি দরে চিনি বিক্রি করছেন।

দেশে যে বেশি দরে চিনি বিক্রি হচ্ছে, ক্রয় কমিটির কয়েকটি বৈঠকেই তার প্রমাণ রয়েছে। যেমন তুরস্ক থেকে দুই সপ্তাহ আগেই ৮৩ টাকা কেজি দরে চিনি কেনার প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে। এক মাস আগে মালয়েশিয়া থেকে ৮৯ টাকা ৫০ পয়সা ও ৮৮ টাকা ৭৪ পয়সা কেজি দরে চিনি কেনার দুটি প্রস্তাব অনুমোদিত হয়।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ক্রয় কমিটিতে চিনির যত প্রস্তাব পাস হয়েছে, এর কোনোটিতেই কেজিপ্রতি দর ৯০ টাকার বেশি ছিল না। এমনকি গত ১১ জানুয়ারি ভারতের কলকাতার শ্রীনোভা ইস্পাত প্রাইভেট লিমিটেড থেকে কেনা চিনির দাম পড়েছিল প্রতি কেজি ৫৬ টাকা ২২ পয়সা।

চিনি পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মতে, চিনি আমদানিতে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক, ভ্যাট ও জাহাজভাড়া ইত্যাদি বিবেচনায় নিয়ে হিসাব করলে দেশের বাজারে প্রতি কেজিতে দাম আরও ৩০ টাকার বেশি বাড়বে।

এদিকে বিটিটিসির হিসাবে, দেশে বছরে চিনির চাহিদা ১৮ থেকে ২০ লাখ টন। চিনির প্রায় পুরোটা বিদেশ থেকে আমদানি করে পরিশোধন এবং বাজারজাত করা হয়। এর বাইরে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশন উৎপাদন করে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টন চিনি।

দুই সপ্তাহ আগে সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে বলেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে টনপ্রতি চিনির দাম বাড়ায় চিনি আমদানির ঋণপত্র খুলতে ‘ভীতির সম্মুখীন’ হচ্ছেন অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা।