কিয়ামতের দিন যে ৪ প্রশ্নের উত্তর দিতেই হবে

কিয়ামতের দিন যে ৪ প্রশ্নের উত্তর দিতেই হবে

পৃথিবীর সব কিছু একদিন ধ্বংস হবে। সংঘটিত হবে কেয়ামত দিবস। পৃথিবীতেই হবে কিয়ামতের ময়দান। এ সম্পর্কে কোরআনে এসেছে, ‘(বিচার দিবসে) আল্লাহ জমিনকে এমন সমতল মসৃণ ধূসর ময়দানে পরিণত করবেন যে, তুমি তাতে কোনো বক্রতা ও উচ্চতা দেখতে পাবে না। ’ (সুরা তাহা, আয়াত : ১০৬-১০৭)

হাদিসের ভাষ্য মতে, পৃথিবীর উপরিভাগে একটি চাদর রয়েছে, একে পার্শ্ব ধরে টান দেওয়া হবে। ফলে গাছপালা, পাহাড়-পর্বত সাগরে পতিত হবে। অতঃপর সমতল হয়ে যাবে। আল্লাহ তাআলা কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘আর আমি জমিনের উপরিভাগকে (বিচার দিবসে) উদ্ভিদশূন্য মাটিতে পরিণত করে দেব। ’ (সুরা : কাহাফ, আয়াত : ৮)

হাশরের ময়দানের বর্ণনা দিতে গিয়ে মহানবী (সা.) বলেন, ‘কেয়ামতের দিন মানবজাতিকে লাল-শ্বেত মিশ্রিত এমন এক সমতল ভূমিতে একত্র করা হবে, যেন তা পরিচ্ছন্ন আটার রুটির মতো। ওই জমিনে কারো (বাড়িঘরের বা অন্য কিছুর) চিহ্ন থাকবে না। ’ (বুখারি ও মুসলিম)

কিয়ামতের দিন পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে কেউ সামনে অগ্রসর হতে পারবে না। হজরত আবু বারজাহ আল আসলামি নাজলাহ বিন উবাইদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘কিয়ামতের দিন বান্দা (চারটি) প্রশ্নের উত্তর না দেওয়া পর্যন্ত দুই পা সরাতে পারবে না। এক. কোন কাজে জীবন ব্যয় করেছে, দুই. ইলম অনুসারে কেমন আমল করেছে, তিন. কোন খাত থেকে সম্পদ উপার্জন করেছে এবং কোথায় তা ব্যয় করেছে, চার. নিজের যৌবনকে কোন কাজে বরবাদ করেছে।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২৪১৭)

উল্লিখিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) এমন চারটি বিষয়ের উল্লেখ করেছেন, যার উত্তর দেওয়া ছাড়া কেউ পরকালে মুক্তি পাবে না। আর এই চারটি বিষয়ে উত্তর দেওয়া মানুষের জন্য তখনই সহজ হবে, যখন পৃথিবীতে সে এসব বিষয়ে সচেতন থাকবে।

ইসলাম মানুষকে সব সময় আত্মজিজ্ঞাসা করার নির্দেশ দিয়েছেন। মানুষ নিজের হিসাব নিজে করবে। ফলে আল্লাহর নির্দেশনা মতে চলা সহজ হবে এবং কিয়ামতের দিন তার জিজ্ঞাসাও সহজ হবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনরা, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং প্রত্যেকে যেন ভাবে আগামীর জন্য সে কী পাঠিয়েছে, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, তোমরা যা করো আল্লাহ সে সম্পর্কে অবহিত।’ (সুরা : হাশর, আয়াত : ১৮)

আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, ‘তোমাদের হিসাব গ্রহণের আগে তোমরা নিজেদের হিসাব নাও। পরকালের জন্য তোমরা কী কী প্রস্তুত করেছ, মহান রবের কাছে উপস্থাপনের জন্য কী কী ভালো কাজ করেছ, তোমরা তা যাচাই-বাছাই করো।’

পৃথিবীতে নিজের হিসাব নেওয়াকে বিজ্ঞতার পরিচায়ক বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। শাদ্দাদ বিন আউস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘ওই ব্যক্তি বুদ্ধিমান, যে ব্যক্তি নিজের হিসাব নেয় এবং মৃত্যুপরবর্তী জীবনের জন্য আমল করে। ওই ব্যক্তি ব্যর্থ, যে নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে এবং আল্লাহর কাছে আশা করে বসে থাকে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৪৫৯)

আখিরাতে চিরস্থায়ী সুখ-শান্তির জন্য দুনিয়ায় নিজের হিসাব নেওয়া জরুরি। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর যে ব্যক্তি মহান রবের সামনে দাঁড়ানোকে ভয় করে এবং প্রবৃত্তি থেকে নিজেকে বিরত রাখে, জান্নাতই তার আবাস হবে।’ (সুরা : নাজিআত, আয়াত : ৪০-৪১)