রমজান মাসে মৃত্যু হলে কি কবরের আজাব মাফ হয়?

রমজান মাসে মৃত্যু হলে কি কবরের আজাব মাফ হয়?

নূর মুহাম্মদ রাহমানী

রমজান মাসে মুসলমানদের জন্য রোজা রাখা ফরজ। মহিমান্বিত শবে কদরও এ মাসেই। কোরআনুল কারিমের ভাষ্য মোতাবেক এ রাতের ইবাদত হাজার মাস ইবাদত থেকেও উত্তম। এ মাসেই মহান আল্লাহ অবতীর্ণ করেছেন পবিত্র কোরআন। রমজানের শ্রেষ্ঠত্ব ও মাহাত্ম্য বর্ণনা করে রাসুল (সা.) বলেন, ‘রমজান মাস যখন আসে তখন জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, দোজখের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানের পায়ে বেড়ি পরিয়ে দেওয়া হয়।’ (সহিহ বোখারি : ১৮৯৯)।

এ মাসের একেকটা মুহূর্ত এত বরকতময় ও সৌভাগ্যময় যে, অবশিষ্ট এগারো মাস মিলেও এর সমান হবে না। ইবাদতের এ ভরা মৌসুমে শয়তানকে করা হয় শৃঙ্খলিত। ফলে ইবাদত করা খুবই সহজ। সাহাবি আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে মহানবী (সা.) বলেন, ‘যখন রমজানের প্রথম রাত আগমন করে তখন শয়তান ও অবাধ্য জিনদের পায়ে বেড়ি লাগিয়ে দেওয়া হয়। জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়, এর একটা দরজাও খোলা হয় না। একজন আহ্বানকারী আহ্বান করে, হে কল্যাণকামী, অগ্রসর হও। হে মন্দ অনুসন্ধানকারী, থেমে যাও। আর আল্লাহ তায়ালা অনেক লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করে দেন। রমজানে প্রতি রাতেই এমনটি হতে থাকে।’ (তিরমিজি : ৬৮২)

প্রতিদিনের দোয়া
বস্তুত সৃষ্টিজগতের সবকিছুই আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের মুখাপেক্ষী। একজন সচেতন মুসলিম যেকোন প্রয়োজনে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের শরণাপন্ন হয়। দোআ এক ধরনের জিকির (স্মরণ)। আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা পবিত্র কোরআনে ও তাঁর রাসুলের মাধ্যমে আমাদের শিখিয়েছেন কিভাবে তাঁর কাছে চাইতে হবে। নগদ ইসলামিক অ্যাপে ইসলামিক জীবন-এর প্রতিদিনের দোয়া ফিচারে আছে নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় দোয়াসমূহ। লগইন করেই প্রতিদিনের দোয়া ফিচারটি ব্যবহার করে শিখে নিন এবং আমল করুন প্রয়োজনীয় দোয়া।

ইবাদতের বসন্তকাল এ মাসকে হাদিসে সব মাসের সরদার উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছে। এ মাসে কেউ মারা গেলেও সে সৌভাগ্যবান। এ মৃত্যু তার সৌভাগ্যের নিদর্শন। তবে অনেককে বলতে শোনা যায়, রমজানে কেউ মারা গেলে তার কবরের আজাব মাফ হয়ে যায়। এ কথাটি কতটুকু সত্য? এ ব্যাপারে কোনও কোনও গবেষকের বক্তব্য হলো, রমজানে মৃত্যুর বিশেষ কোনও ফজিলত সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত নয়। পুরো রমজান রোজা রেখে কেউ মারা গেলে তার ব্যাপারে ফজিলতের কথা এসেছে—এটাতো তার কর্মের কারণে। রমজানের কারণে নয়। ঈমান-আমল হলো মানুষের মর্যাদার মূল বিষয়। ঈমান-আমল ছাড়া শুধু রমজানে মারা গেলে তার এ ফজিলত লাভ হতে পারে না।

অপর একদল আলেমের বক্তব্য হলো, রমজানে মারা গেলে কবরের আজাব থেকে মুক্তি পায় এমন কোনও বিশুদ্ধ বর্ণনা পাওয়া যায় না তা ঠিক। তবে জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয় এটুকু হাদিসে আছে। অতএব এ মাসে মারা গেলে দোজখের শাস্তি কবরের শাস্তি থেকে সে নিরাপদে থাকবে যেহেতু দোজখের দরজা-ই বন্ধ।

তবে এতে কোনও সন্দেহ নেই যে, এ মাসে মৃত্যুবরণ করাটা সৌভাগ্যের নিদর্শন। কোনও ব্যক্তি নেক আমল নিয়ে এ মাসে ইন্তেকাল করতে পারলে এটা তার জন্য অতিরিক্ত মর্যাদার কারণ হবে।

মূলকথা হলো, যে ব্যক্তি ঈমান ও আমল নিয়ে কবরে যাবে সে দিনে কিংবা যে মাসেই মৃত্যুবরণ করুক সফলতা তাকে স্পর্শ করবে। পরকালে মুক্তির জন্য ঈমান ও যথানিয়মে আমল একান্ত জরুরি। পরপারে নাজাতের জন্য আমলের মাধ্যমে কঠোর সাধনা করার বিকল্প নেই। আল্লাহ বলেন, ‘হে মানুষ, তুমি তোমার প্রতিপালকের কাছে পৌঁছা পর্যন্ত কঠোর সাধনা করে থাকো, পরে তুমি তার সাক্ষাৎ করবে।’ (সুরা ইনশিকাক, আয়াত : ৬)

এজন্য সবসময় আমাদের মনোযোগ থাকবে ঈমান ও আমলের পরিচর্যার প্রতি। ঈমান আর আমলে বলীয়ান লোকদের কর্মই সাদরে গ্রহণ করা হবে এবং তাদেরই স্থায়ী নেয়ামতে ধন্য করা হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর যারা মুমিন হয়ে পরকাল কামনা করে এবং এর জন্য যথাযথ চেষ্টা-সাধনা করে, তাদের প্রচেষ্টা পুরস্কারযোগ্য।’ (সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত : ১৯) আল্লাহ আমাদের সবাইকে ঈমান আমলে সজ্জিত হয়ে রবের ডাকে লাব্বালাইক বলার তৌফিক দান করুন।

লেখক: শিক্ষাসচিব ও মুহাদ্দিস, জামিয়া আরাবিয়া দারুল উলুম বাগে জান্নাত, চাষাড়া, নারায়ণগঞ্জ