মিয়ানমারে বৌদ্ধ মঠে বিমান হামলায় ২৮ জন নিহত

মিয়ানমারে বৌদ্ধ মঠে বিমান হামলায় ২৮ জন নিহত

মিয়ানমারের দক্ষিণাঞ্চলীয় শান প্রদেশের নান নেইন গ্রাম ও সেখানকার একটি বৌদ্ধ মঠে বিমান হামলা চালিয়েছে জান্তা। শনিবার স্থানীয় সময় বিকেল ৪টার দিকে ঘটা অতর্কিত সেই হামলায় বৌদ্ধ মঠ ও তার আশপাশের এলাকায় নিহত হয়েছেন ২৮ জন।

শান ও পার্শ্ববর্তী কিয়াহ প্রদেশে সক্রিয় জান্তাবিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠী কারেন্নি ন্যাশনালিটিস ডিফেন্স ফোর্সের একাধিক নেতা (কেএনডিএফ) এবং ক্ষমতাসীন জান্তার একজন মুখপাত্র বিবিসিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। হামলা পরবর্তী একটি ভিডিওচিত্রও বিবিসিকে সরবরাহ করেছে কেএনডিএফ। সেই ভিডিওচিত্রে ২১ জনের মরদেহ দেখা গেছে।

তাদের মধ্যে ৩ জন কমলা রঙের কাষায়বস্ত্র (বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের পরিধেয় বস্ত্র) পরিহিত ছিলেন। অর্থাৎ নিহতদের মধ্যে বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরাও আছেন।বাকি ৭ জনের দেহ মঠ সংলগ্ন আশপাশের এলাকাগুলো থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া বেশ কয়েকজন গ্রামবাসী আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

কেএনডিএফের নেতারা জানান, শনিবার বিকেল ৪ টার দিকে মিয়ানমারের বিমানবাহিনী গ্রামটির আকাশ সীমায় প্রবেশ করে কয়েক দফা গোলাবর্ষণ করে। গ্রামবাসীদের অনেকেই প্রাণ বাঁচাতে এ সময় পার্শ্ববর্তী জঙ্গলে আত্মগোপন করেন এবং বেশ কয়েকজন সেই মঠে আশ্রয় নেন।

বিমান বাহিনী এরপর সরাসরি সেই মঠের ওপর গোলাবর্ষণ শুরু করে। তার ফলেই ঘটে হতাহতের এই ঘটনা।

প্রদেশের সীমান্তবর্তী নান নেইন গ্রামটি কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এই গ্রামের ভেতর দিয়েই অস্ত্র ও রসদ সরবরাহ আসে কেএনডিএফের। এ কারণে এই গ্রামটি আগে থেকেই জান্তার বিশেষ নজরে ছিল।

মিয়ানমারের স্থানীয় পত্রিকা কান্তারওয়াদি টাইমসকে কেএনডিএফের এক মুখপাত্র বলেন, ‘একদল মানুষকে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ার করলে যে অবস্থা হয়, (বিমানবাহিনী হামলা চালানোর পর) মঠের চিত্রও ছিল অনেকটা সে রকম।’

জাতীয় নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সুচির নেতৃত্বাধীন এনএলডি সরকারকে হটিয়ে জাতীয় ক্ষমতা দখল করে দেশটির সামরিক বাহিনী। জেনারেল মিন অং হ্লেইং সেই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেন। ক্ষমতা দখলের পর সামরিক সরকারের প্রধানও হন তিনি।

সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখলের পর থেকেই মিয়ানমারে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ শুরু করেন সাধারণ জনগণ। বিক্ষোভ দমন করতে জান্তা প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করা শুরু করলে প্রকাশ্য বিক্ষোভ কমে গেলেও প্রতিবাদী জনতার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ যোগ দেন দেশটিতে সক্রিয় জান্তাবিরোধী বিভিন্ন সশস্ত্র সংগঠনে।

ফলে ২০২১ সালের মাঝামাঝি থেকেই জান্তার বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম দানা বাঁধতে মিয়ানমারে। জান্তাবিরোধী সশস্ত্র সংগ্রামের জেরে ইতোমধ্যে দেশটিতে নিহত হয়েছেন প্রায় ৩ হাজার এবং বাস্তুচ্যুত হয়েছেন ৫০ লাখেরও বেশি মানুষ। এছাড়া প্রায় ৪০ হাজার বাড়িঘর সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে, স্কুল থেকে ঝরে পড়েছে প্রায় ৮০ লাখ শিশু-কিশোর এবং জাতিসংঘের হিসেব অনুযায়ী, ৫ কোটি ৩৮ লাখ মানুষ অধ্যুষিত মিয়ানমারে অন্তত দেড় কোটি মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা বর্তমানে চরম সংকটে আছে।

কেডিএনএফ মিয়ানমারের একটি শক্তিশালী সশস্ত্র সংগঠন। শান ও কিয়াহ প্রদেশ মূলত এই সংগঠনই নিয়ন্ত্রণ করে। প্রদেশের সীমান্তবর্তী নান নেইন গ্রামটি কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এই গ্রামের ভেতর দিয়েই অস্ত্র ও রসদ সরবরাহ আসে কেএনডিএফের। এ কারণে এই গ্রামটি আগে থেকেই জান্তার বিশেষ নজরে ছিল।

শান প্রদেশ পিএ-ও নামে আর একটি সক্রিয় সশস্ত্র গোষ্ঠী রয়েছে। তবে ওই গোষ্ঠীটি জান্তাপন্থী। কেএনডিএফকে দমন করতে পিএ-ও’কে জান্তা বিভিন্নভাবে মদত দিচ্ছে বলে বিবিসিকে জানিয়েছেন কেএনডিএফের নেতারা। শনিবারের হামলার ক্ষেত্রে পিএ-ও সরাসরি সংশ্লিষ্ট ছিল বলে অভিযোগ করেছেন তারা।

ক্ষমতাসীন সামরিক বাহিনীও শনিবারের হামলার ঘটনা স্বীকার করেছে। নান নেইন গ্রামের নিকটবর্তী সাউং পিয়াং সেনানিবাসের এক কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেন, ‘কারেন্নি গোষ্ঠী কয়েকটি গ্রাম দখল করেছিল। তাই মিয়ানমার সেনাবাহিনী সেখানে অভিযান চালিয়েছে।’