মাহে রমজান
দোয়া গ্রহণের সর্বোত্তম মাস
আজ আমরা রমজানের মাগফিরাতের দশকের ৬ষ্ঠ দিনের রোজা অতিবাহিত করছি, আলহামদুলিল্লাহ। পবিত্র মাহে রমজান দোয়া কবুলের বিশেষ মাস। আল্লাহতায়ালা সব সময়ই অপেক্ষায় থাকেন বান্দার দোয়া গ্রহণের জন্য, বিশেষ করে রমজানে তিনি অধির আগ্রহে থাকেন তার বান্দা যেন তার দিকে ফিরে আসে।
কুরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন ‘তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব। কিন্তু যারা আমার ইবাদত সম্বন্ধে অহংকার করে, তারা নিশ্চয় লাঞ্ছিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে’ (সুরা মোমেন, আয়াত: ৬০)।
আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুরআনে আরো ইরশাদ করেন, ‘আর যা কিছু তোমরা তার কাছে চেয়েছো তিনি তোমাদের সব দিয়েছেন এবং যদি তোমরা আল্লাহর নেয়ামত সমূহ গণনা করতে চাও তাহলে তোমরা সেগুলোর সংখ্যা নিরূপণ করতে পারবে না’ (সুরা ইব্রাহিম, আয়াত: ৩৪)।
এই আয়াতদ্বয় থেকে স্পষ্ট প্রমাণ হয়, আল্লাহতায়ালা তার বান্দার দোয়া গ্রহণ করার জন্য অধির আগ্রহে অপেক্ষা করেন, কখন তার বান্দা তাকে ডাকবে আর তিনি তা গ্রহণ করবেন এবং তার দুঃখ কষ্ট দূর করবেন। তিনি সবার খুবই নিকটে রয়েছেন, যেভাবে কুরআনে উল্লেখ রয়েছে ‘আর যখন আমার বান্দাগণ আমার সম্বন্ধে তোমাকে জিজ্ঞেস করে, তখন বল, আমি নিকটে আছি। আমি প্রার্থনাকারীর প্রার্থনার উত্তর দেই যখন সে আমার নিকট প্রার্থনা করে। সুতরাং তারা যেন আমার ডাকে সারা দেয় এবং আমার ওপর ঈমান আনে যাতে তারা সঠিক পথ প্রাপ্ত হয়’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৬)।
এ আয়াত থেকে যে বিষয়টি অনুধাবন করা যায়, তাহলো, তিনি প্রার্থনাকারীর প্রার্থনার উত্তর দিয়ে থাকেন। আমারা যদি প্রকৃতভাবে তাকে ডাকি তাহলে অবশ্যই তিনি আমাদের ডাকে সাড়া দিবেন। তিনিতো সেই জীবিত খোদা যেই খোদা পূর্বে কথা বলতেন আর এখনও বলেন, কিন্তু তার সাথে কথা বলার জন্য শুধু প্রয়োজন পবিত্রাত্মার। তাই দোয়া কবুলিয়তের জন্য শর্ত হচ্ছে আত্মাকে পবিত্র করা আর এই রমজানের রোজা আত্মা পবিত্র করার সর্বোত্তম মাধ্যম।
মহানবী (সা.)এর সব কিছুই ছিল আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টির জন্য। তাইতো তিনি (সা.) সবসময় আল্লাহর মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতেন। তার (সা.) দোয়ার বরকতে লক্ষ লক্ষ আধ্যাত্মিকভাবে মৃতরা জীবন ফিরে পেয়েছে, আধ্যাত্মিক অন্ধরা দৃষ্টি ফিরে পেয়েছে, বোবাদের মুখে ঐশী তত্ত-জ্ঞান ফুটেছে এবং বংশ পরম্পরায় পথভ্রষ্টরা ঐশী রং ধারণ করার যোগ্য হয়েছে। আমরা যদি প্রকৃতভাবে সেই মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের বান্দা হই যিনি আমাদেরকে কেবলমাত্র তার ইবাদতের উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছেন তাহলে তিনি অবশ্যই আমাদের ডাকেও সাড়া দেবেন।
আল্লাহতায়ালা দোয়া কবুল করবেন এবং করার ক্ষমতা রাখেন, এই দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে দোয়া করতে হবে এবং আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ হবার অবকাশ নেই। দোয়া করার পূর্বে নিজ শরীর, কাপড়-চোপড় এবং পরিবেশ পবিত্রতার প্রতিও লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন।
কেননা, আল্লাহতায়ালা পবিত্র, তাই তিনি পবিত্রতাকেই বেশি পছন্দ করেন। দোয়ার জন্য এক নীরব নিস্তব্ধ কোলাহলমুক্ত পরিবেশ বেছে নেয়া দরকার যাতে দোয়ার মাঝে পূর্ণ একাগ্রতা সৃষ্টি হয়। আল্লাহতায়ালা আমাদের সকলকে এই পবিত্র মাহে রমজানে অনেক বেশি দোয়া করার তৌফিক দান করুন, আমিন।
লেখক: ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট।